এবার গরু, মোষের মতো গবাদি পশুর শরীরে হওয়া এক বিশেষ ধরনের চামড়ার অসুখ - লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) - এর মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এই রোগের মোকাবিলা করতে একটি প্রতিষেধক বাজারে আনছে 'ভারত বায়োটেক' গোষ্ঠীরই শাখা সংস্থা 'বায়োভেট'। ইতিমধ্যেই জাতীয় ওষুধ নিয়ামক সংস্থা তাদের সেই অনুমতি দিয়েছে। সোমবার সংস্থার পক্ষ থেকে একথা ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারত বায়োটেক কর্তৃপক্ষর দাবি, এর ফলে দেশের হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ গবাদি পশুকে এই অসুখের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। তথ্য বলছে, মাত্র গত ২ বছরেরই সারা দেশে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২ লক্ষ গবাদি পশুর প্রাণ গিয়েছে। পাশাপাশি, এই একই অসুখের প্রভাবে আরও কয়েক লক্ষ গবাদি পশুর দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে, এটি এক ধরনের ভাইরাল ব্যধি।
এই প্রতিষেধকের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে - বায়োল্যাম্পিভ্যাক্সিন। সূত্রের দাবি, এটি হল বিশ্বের প্রথম 'ডিফারেনশিয়েটিং ইনফেকটেড ফ্রম ভ্যাকসিনেটেড অ্যানিম্যালস (ডিআইভিএ) মার্কার ভ্যাকসিন'। যা গবাদি পশুর রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নজরদারি চালাতে সহায়তা করবে। অর্থাৎ - বিশেষজ্ঞরা এই প্রতিষেধক দেওয়া গবাদি পশুর দুধ এবং প্রাকৃতিকভাবে সংক্রামিত গবাদি পশুর দুধের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হবেন।
এই প্রসঙ্গে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশ করা একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'খুবই শীঘ্রই বায়োল্যাম্পিভ্যাক্সিন নামক এই প্রতিষেধকটি বাজারে এসে যাবে। যা এলএসডি-র জন্য বিশ্বের একমাত্র মার্কার ভ্যাকসিন। এটির নিরাপত্তা বা সুরক্ষা প্রদানের ক্ষমতা অত্যন্ত উচ্চমানের।'
এই প্রতিষেধকটিকে ইতিমধ্য়েই অনুমোদন দিয়েছে ওষুধের মান নির্ণয়কারী ভারতের কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা - সিডিএসসিও।
সংশ্লিষ্ট বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, 'আইসিএআর-এনআরসিই এবং ইন্ডিয়ান ভেটেরিনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইভিআরআই)-এ ইতিমধ্যেই এই ভ্যাকসিনের গুণমান, নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা সার্বিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। যাতে এটি সর্বোচ্চ বিশ্বমানের মাপদণ্ড পূরণ করতে পারে।'
লাম্পি স্কিন ডিজিজ হল এমন একটি ব্যধি, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে গবাদি পশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এর প্রভাবে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য এবং দুগ্ধ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনও গবাদি পশু এই রোগে আক্রান্ত হলে তার সারা শরীরে টিউমারের মতো ফোলা ফোলা অংশ তৈরি হয়। পশুটি জ্বরে আক্রান্ত হয়। ক্রমশ দুধের উৎপাদন কমতে থাকে এবং পশুটি ঠিক মতো হাঁটাচলাও করতে পারে না।
এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার নেপথ্য়ে মশা, টিকটিকি বা অন্য়ান্য পোকামাকড়ের কামড়ের ভূমিকা থাকে। সূত্রের দাবি, ২০২২ সালে ভারতে যখন এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, সেই সময় গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরের মতো রাজ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ গবাদি পশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এবং আক্রান্ত গবাদি পশুর মধ্য়ে ৬৭ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছিল।