ইদ-উল-ফিতর পালনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিপুল লোভনীয় খাদ্য সমাবেশের আয়োজন। রমজান মাসের টানা কৃচ্ছ্রসাধনের শেষে ঈদের চাঁদ দর্শনের পরে আত্মীয়-পরিজনদের নিয়ে ভোজে মিলিত হন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। উৎসবে পরিবেশিত হয় হরেক স্বাদু পদ, যার প্রতিটিই সমান আকর্ষণীয়। উৎসবের প্রাক্কালে দেখে নেওয়া যাক তারই কয়েকটি।
আওয়াধি মটন বিরিয়ানি
বিরিয়ানি ছাড়া ইদের আনন্দ ফিকে থেকে যায়। সুগন্ধি চাল, পছন্দের মাংস একসঙ্গে সুগন্ধী মশলায় মিলেমিশে যে অসামান্য পদ তৈরি হয়, তার সুঘ্রাণ নাকে পৌঁছলে খিদে বেড়ে যায় হাজার গুণ। গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে বিরিয়ানির নানান বৈচিত্র এবং রান্নার পদ্ধতি রয়েছে। অখানে আওয়াধি ঘরানার বিরিয়ানি রান্নার প্রক্রিয়া জানানো হল।
রান্নার পদ্ধতি
একটি ২ ইঞ্চি লম্বা দারচিনি, ৮-১০ টি লবঙ্গ, ২-৩ চা চামচ গোটা জিরে, ১ চা চামচ মৌরি, ২-৩ চা চামচ গোটা ধনে, এক চা চামচ গোলমরিচ, ২টি স্টার অ্যানিস, ২-৩টে জয়িত্রী, ২-৩টি বড় এলাচ, 3-4টে৩-৪টি ছোট এলাচে শুকনো ভেজে গুঁড়ো করে নিন।
আধ কেজি খাসির মাংসে আদা-রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, কাজুবাটা, দই, তৈরি করা গরম মশলা দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে এক ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন।
একটি হাঁড়িতে ঘি ও তেল গরম করে এতে মেখে রাখা মাংসটি ছাড়ুন। এতে নুন দিয়ে কিছুক্ষণ রাঁধুন। মাংসটি অর্ধেক সিদ্ধ হয়ে গেলে, এতে আধকাঁচা চাল বিছিয়ে এর ওপরে দিন দুধে মেশানো জাফরান, সামান্য নুন, গরম মশলা গুঁড়ো, বেরেস্তা ও ঘি। এরপর হাঁড়ির মুখ ভালো করে বন্ধ করে তার ওপরে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিন। অল্প আঁচে আধঘন্টা দমে বসান। গরম গরম পরিবেশন করুন।
নিহারি
নিহারি শব্দের উৎপত্তি আরবি শব্দ 'নাহার' থেকে, যার অর্থ 'দিন'। সাধারণত এই পদটি প্রাতঃরাশে খাওয়া হয়। তবে ইদ বা অন্য কোনও উৎসবেও মুসলিম সমাজে নিহারি রান্নার প্রচলন রয়েছে।
রান্নার পদ্ধতি
গরম তেলে লম্বা করে কাটা পেঁয়াজ বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এরপর একে একে আদা-রসুন বাটা, হলুদগুঁড়ো ও ধনেগুঁড়ো দিয়ে নাড়তে থাকুন। মশলা তেল ছাড়লে দারচিনি গুঁড়ো, লবঙ্গ, কম মিহি গুঁড়ো করা বড় এলাচ ও নুন দিন। সব কিছু ভালো ভাবে কষে এবার কড়াইয়ে খাসি বা পাঁঠার নলি দিয়ে ৬ কাপ জল মেশান। এবার কড়াই ঢাকা দিয়ে স্বল্প আঁচে নলি নরম হওয়া পর্যন্ত দু'ঘণ্টা ফোটান। শেষে লেবুর রস ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে ৫ মিনিট ফোটালেই তৈরি নিহারি।
মাটন কোরমা
মাটন কোরমার গন্ধে খিদে চাগাড় দেয়নি, এমন খাইয়ের সন্ধান পাওয়া কঠিন। আমন্ড বাটা, কেওড়া জল, সুগন্ধি মশলা, জাফরান সব মিলেমিশে মাংসে যে সুগন্ধের তুফান তোলে, তাকে এড়ানো কঠিন।
রান্নার পদ্ধতি
২ চা চামচ তেল ও 1 চা চামচ ঘি গরম করে এতে লম্বা করে কাটা আমান্ড দিন। হালকা ভেজে আমন্ডগুলি সরিয়ে নিন। ওই একই তেলে লম্বা করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে হালকা বাদামী রঙের ভেজে নিন। এরপর একটি মিক্সার জারে ভাজা পেঁয়াজ, আমান্ড ও দই দিয়ে বেটে নিন।
এবার দুই চা চামচ তেল ও ঘি গরম করে এতে দু'টি ছোট দারুচিনি, ১ চা চামচ গোটা জিরে, দু'টি বড় এলাচ, ৩-৪ টি ছোট এলাচ, দু'টো লবঙ্গ, এক চা-চামচ গোলমরিচ এবং তিনটে তেজপাতা দিন। এবার এতে মাংসের টুকরো দিয়ে দু'মিনিট অল্প আঁচে নাড়াচাড়া করুন। এরপর এক এক করে হলুদগুঁড়ো, কাশ্মীরি লাল লঙ্কাগুঁড়ো, আদা-রসুন বাটা দিয়ে নাড়ুন। কিছুক্ষণ পরে এতে আমন্ড-পেঁয়াজবাটা দিয়ে ভালো ভাবে মেশান। তিন মিনিট পর্যন্ত নাড়াচাড়া করার পরে নুন, গরম মশলা, কেওড়া জল দিয়ে ভালো করে কষুন। তেল ছেড়ে দিলে জল দিয়ে ঢাকা দিন। মাংস ভালো ভাবে সেদ্ধ হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।