গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (জিএইচএমসি) নির্বাচনে বিজেপি-র সাফল্য দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে এবার রাজ্যে ক্ষমতাধীন তেলাঙ্গনা রাষ্ট্রীয় সমিতি সরকারকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনা করেছে গেরুয়া ব্রিগেড।
তেলাঙ্গনায় রাজ্য বিজেপি সভাপতি বান্দি সঞ্জয় ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য তেলাঙ্গনা দখল করা এবং খুব তাড়াতাড়ি সেই উদ্দেশে আমাদের প্রচেষ্টা শুরু হবে।’
জিএইচএমসি নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে শেষ করা বিজেপি ১৫০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি দখল করেছে। ভোট ভাগাভাগির পরিসংখ্যানে অবশ্য টিআরএস ও বিজেপি প্রায় সমান স্থানে রয়েছে। শাসকদলের পক্ষে ভোট পড়েছে ৩৫.৮১% এবং বিজেপির ঝুলিতে এসেছে ৩৫.৫৬% ভোট।
বিজেপি রাজ্য প্রধানের দাবি, ‘আমাদের বেশি সময় না দিয়ে অতি দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করে টিআরএস সরকার। এর ফলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশি সময় পাওয়া যায়নি। না হলে আমরা নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেতাম, এমনকি ১০০ আসন জয় করাও অসাধ্য ছিল না।’ জিএইচএমসি নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন সঞ্জয়।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে বার বার টিআরএস ও মজলিশি-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন দলের গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলে ধরেছে বিজেপি। সেই সঙ্গে পুরনো হায়দরাবাদ শহর থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহিষ্কার, হায়দরাবাদ শহরের নাম পরিবর্তন করে ভাগ্যনগর রাখার মতো চূড়ান্ত হিন্দুত্ববাদী তাস খেলায় জোর দিয়েছে পদ্ম শিবির। এ ছাড়া নাগরিক পরিষেবা থেকে সৃষ্টি হওয়া টিআরএস-বিরোধী হাওয়াও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে বিজেপি।
নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার পরে এক টিআরএস নেতাই ব্যাখ্যা করেছেন, ‘যে সমস্ত ওয়ার্ডে বিজেপি জিতেছে, তাদের অধিকাংশ সাম্প্রতিক অতিবর্ষণ ও বন্যার দরুণ বানভাসি হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে সারুরনগর, হায়াতনগর, গাড্ডিয়ান্নরম, নাগোলে, মুসরামবাগ, অম্বরপেট, রামনাথপুর, উপ্পল, কাভাডিগুডা ও মাইলারদেবপল্লি। বন্যাত্রাণে পরিবারপিছু নগদ ১০,০০০ টাকা বণ্টন করেও প্রশাসনের বিরুদ্ধে জমে থাকা মানুষের ক্ষোভ কমানো যায়নি আর তার জেরে ভোটে মুনাফা গুনেছে বিজেপি।’
ভোটের ফলে আরও একটি ব্যাপার স্পষ্ট, রামনগর, কাচিগুডা, গান্ধীনগর, নাল্লাকুন্তা, বাগ অম্বরপেট, মুশিরাবাদের মতো কট্টর টিআরএস ঘাঁটিও এবার হাতছাড়া হয়েছে শাসকদলের। বস্তুত তেলাঙ্গনা রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে দীর্ঘ দিন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এই সব এলাকার বাসিন্দারা।
অন্য দিকে, সেরিলিঙ্গমপল্লি, কুকাটপল্লি, কুতুবউল্লাপুর ও জুবিলি হিলসের মতো যে সব কেন্দ্রে টিআরএস প্রার্থীরা জিতেছেন, সেই সব অঞ্চলে মূলত অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আসা মানুষের আধিক্য। সাধারণ অবস্থায় তাঁদের বিজেপি-কে ভোট দেওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ায় হাওয়া ঘুরে গিয়েছে টিআরএস-এর পক্ষে। এই অঞ্চলে মাত্র তিনটি আসনে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থীরা।
তবে জিএমএইচসি নির্বাচনের ফল রাজ্যবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ছেড়েছে যে, কংগ্রেস নয়, টিআরএস-এর একমাত্র বিকল্প হতে পারে বিজেপিই। সেই আস্থায় ভর করেই এবার বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে গেরুয়া শিবির।