বঙ্গ বিজেপির অন্দরে এখন কান পাতলেই শোনা যায় বিদ্রোহের সুর। সেই বিদ্রোহী সুরকে জুড়ে জুড়ে গান তৈরি করছেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। বিদ্রোহীদের সঙ্গে পরপর বৈঠক ও পিকনিকে রাজ্য রাজনীতি ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছেন তিনি। আর এই আবহে এবার শান্তনুকে বৈঠক করতে দেখা গেল কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে। দিল্লিতে এই বৈঠকে শান্তনু-কৈলাস ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। আর এই বৈঠক ঘিরেই নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা।
মনে করা হচ্ছে, বিজেপির অন্দরে চলতে থাকা চলমান বিদ্রোহের আগুনে জল ঢালতে শান্তনুর সঙ্গে বৈঠক করলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বঙ্গ বিজেপির একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র উপরও। বাংলার জায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচনের পরে আর সেভাবে দেখাই যায়নি রাজ্যে। তবে বঙ্গ রাজনীতিতে ফের একবার সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে নামলেন কৈলাস। ভোটের আগে তৃণমূল ভাঙানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। আর আসন্ন পুরভোটের আগে ভাঙন রুখে দলকে একজোট রাখাই তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ।
এদিকে সিএএ নিয়ে অসন্তুষ্ট মতুয়া সম্প্রদায়। বাংলায় বিজেপির উত্থানের নেপথ্যে অন্যতম কারণ মতুয়া। এই সম্প্রদায় বিজেপির দিকে ঝুঁকতেই বাংলায় পায়ের তলায় মাটি শক্ত করার স্বপ্ন দেখেছে গেরুয়া শিবির। তবে যেই সিএএ-র স্বপ্ন দেখিয়ে মতুয়াদের নিজেদের কাছে টেনেছিল বিজেপি, সেই সিএএ এখনও লাগু হয়নি। আইন পাশ হওয়ার পর দীর্ঘদিন পার হয়েছে। আইনের নিয়ম বানানোর জন্য পরপর মেয়াদ পার হচ্ছে, আবার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। আইন লাগু করা নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে এই আবহে অধৈর্য হয়ে পড়ছেন মুতায়ারা। আর এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারও শোনা গিয়েছে শান্তনুর গলায়।
আর মতুয়া দাবির মাঝেই রাজ্যের বিভিন্ন কমিটি নিয়ে অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। রাজ্য কমিটি থেকে রীতেশ তিওয়ারি, সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদারদের মতো হেভিওয়েট ‘আদি’ নেতারা বাদ পড়েছেন। জেলা কমিটি ঘিরেও ক্ষোভ বাড়ছে। দলে নেই এমন নেতার নামও কমিটিতে জুড়ে দিচ্ছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে সব বিদ্রোহীদের নিয়েই দফায় দফায় বৈঠকে বসেছেন শান্তনু। বিজেপির অন্দরে বিদ্রোহীদের সংগঠিত করার কাজ করছেন তিনি। আর এবার এহেন শান্তনুর সঙ্গেই বৈঠকে বসলেন কৈলাস। অন্তর্কলহ নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যত নাজেহাল অবস্থা রাজ্য নেতৃত্ব। তবে উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নজর দিতে পারছেন না বাংলার দিকে। আর তাই বঙ্গ বিজেপিতে ভআঙন ঠেকাতে ফের একবার কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে সক্রিয় করে তোলা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এহেন পরিস্থিতিতে শান্তনু ঠাকুর এবং নীশিথ প্রামাণিকের সঙ্গে এদিন তাঁর বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।