রাজস্থানের ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যেই সংকটের মুখোমুখি বিজেপি সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর বিভাগে আবাসন প্রকল্পের একটি ফাঁক সামনে এনেছে বিজেপিরই মন্ত্রী। অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দিষ্ট এই প্রকল্পের জন্যই সরকারের কোষাগারের ১,১৪৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ভজন লাল শর্মার নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার রাজস্থানে ক্ষমতায়। এমতাবস্থায়,প্রবীণ বিজেপি নেতা এবং কৃষিমন্ত্রী কিরোদি লাল মীনার এই বিস্ফোরক অভিযোগ ভোটপর্বে অস্বস্তির মুখে ফেলেছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে।
শর্মাকে লেখা একটি চিঠিতে, প্রবীণ বিজেপি নেতা মীনা অভিযোগ করেছেন যে জয়পুরের গান্ধীনগরে সিনিয়র বিচারপতি এবং আইএএস অফিসারদের আবাসনের জন্য হাউজিং কমপ্লেক্স প্রকল্পটির জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ১,১৪৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। মীনা বলেছিলেন যে মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে সাধারণ প্রশাসন বিভাগ (জিএডি), মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে চলেছে এবং প্রকল্পটি অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। এই প্রথম নয়, এর আগেও মন্ত্রী কিরোদি লাল মীনা নিজের সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করেছেন। গত মাসে, তিনি পূর্ব রাজস্থান খাল প্রকল্পের অধীনে জমি বিক্রি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং দুর্নীতির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যার পরে মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
- কিন্তু কীভাবে এত বড় ক্ষতির হিসাব করেছেন মীনা
রাজস্থানের, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ গান্ধীনগরের পুরনো এমআরইসি ক্যাম্পাস ভবনগুলি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। পাঁচ বছর আগে সম্পত্তিটির মূল্য ছিল ২৭৭ কোটি টাকা, কিন্তু এখন তা কমে ২১৮ কোটি টাকা হয়েছে। এটা বলা হয় যে বর্তমানে জমির সংরক্ষিত মূল্য ২৫ হাজার টাকা হলেও, তা দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার বর্গফুটের জন্য। এর ফলে প্রতি বর্গফুটে ১৭ হাজার টাকা ক্ষতি হবে রাজ্য সরকারের। মীনা বলেছিলেন যে এই হাউজিং কমপ্লেক্স প্রকল্পের অধীনে, রাজ্য সরকার পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বের অধীনে বেসরকারি ব্যক্তিদের ফ্ল্যাটের এক-তৃতীয়াংশ দেবে। এর থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১,১৪৬ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। আর এই প্রকল্পের ফাইলটি মন্ত্রিসভা বা অর্থ মন্ত্রকের দ্বারা পাস করা হয়নি বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মাকে অবিলম্বে এটি প্রত্যাহার করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী কিরোদি লাল মীনা।
উল্লেখ্য, মীনা বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন এবং নির্বাচনী প্রচারে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। গত বছর অশোক গেহলটের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের পতনের পর, প্রথমবারের বিজেপি বিধায়ক ভজন লাল শর্মাকে মুখ্যমন্ত্রী করে আশ্চর্যজনক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল রাজস্থানে। যার ফলে দুইবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের নেতৃত্বাধীন দলে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল।
মীনাকে যে পোর্টফোলিও বরাদ্দ করা হয়েছিল তাতে তিনি অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। বলা হচ্ছে, তিনি দৌসা লোকসভা কেন্দ্র থেকে তার ভাইয়ের জন্য টিকিট চাইছিলেন, কিন্তু এটি কানহাইয়া লাল মীনাকে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজস্থানে ২৫ টি আসনের মধ্যে ২৪ টি জিতেছিল, একমাত্র অবশিষ্ট আসনটিও এনডিএ মিত্রের কাছে গিয়েছিল। এটি ২০১৪ সালেও ২৫টি আসন জিতেছিল এবং এই দুটি নির্বাচনই বসুন্ধরা রাজের অধীনে লড়েছিল।
বলা বাহুল্য, এই বছরের লোকসভা নির্বাচনকে নতুন প্রশাসনের জন্য একটি লিটমাস পরীক্ষা হিসাবে দেখা হচ্ছে। যদি রাজস্থানে বিজেপির আসন হ্রাস পায়, মুখ্যমন্ত্রী শর্মার বিরুদ্ধে স্বর আরও চড়বে।