জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার গুরেজ আসনে পরাজিত হয়েছে বিজেপি। তবে এই পরাজয়কে ঘিরে একটা তাৎপর্যপূর্ণ পরিসংখ্যান দেখিয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। তিনি লিখেছেন, বিজেপি বারামুল্লার গুরেজ আসনে পরাজিত হয়েছে। মাত্র ১,১৩২ আসনে পরাজিত হয়েছে বিজেপি। এটা হল সেই আসন যেখানে ৯৮ শতাংশই মুসলিম। এখনও পর্যন্ত সেখানে বিজেপির কোনও উপস্থিতি নেই। যারা কাশ্মীর নিয়ে লেকচার দিচ্ছিলেন সেটা এবার সামনে আসছে।
কার্যত মুসলিম অধ্যুষিত গুরেজ আসনে মাত্র অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে বিজেপি। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ একটা চালু কথা রয়েছে যে মুসলিমরা বিজেপিকে বিশেষ ভোট দেয় না। সেক্ষেত্রে এত ভোট গুরেজ আসনে কীভাবে পেল বিজেপি?
এদিকে এবার ভোটের আগে বান্দিপোরা জেলার নিয়ন্ত্রণ রেখার গুরেজ উপত্যকাতেই নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেছিলেন, 'নতুন ভারত' পাল্টা আক্রমণ করবে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং নরেন্দ্র মোদী সহ পরবর্তী সরকারগুলি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানকে পরামর্শ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, 'প্রতিটি সরকারই পাকিস্তানকে ক্রমাগত কাউন্সেলিং করছে। আপনারা জানেন, একবার আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী খালি পায়ে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সমস্ত প্রোটোকল ভেঙে নওয়াজ শরিফের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাকিস্তানে যান মোদী। ভারতের প্রতিটি সরকারই পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু তারা এখনও তা থেকে বিরত নয়।
বান্দিপোরা জেলার সুরম্য গুরেজ উপত্যকা একসময় ঘন ঘন নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গোলাবর্ষণের জন্য পরিচিত ছিল, কিন্তু নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি এবং পরিস্থিতির উন্নতির পরে এটি একটি প্রধান সীমান্ত পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সামনে এসেছে।
প্রথমবার গুরেজ উপত্যকায় এসে রাজনাথ সিং বলেছিলেন, এবারের নির্বাচন অন্য যে কোনও রাজ্যের মতো নয়। তিনি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন কোনও সাধারণ নির্বাচন নয়। এটি ভারতের গণতন্ত্রের শক্তি এবং তার শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এই জাতি গঠনে প্রত্যেক মানুষ তার ভূমিকা পালন করেছে। আর আপনারা আপনাদের ভোট দিয়ে এই ভূমিকা পালন করতে পারেন।
মন্ত্রী গুরেজে দলের প্রার্থী ফকির মহম্মদ খানের পক্ষে প্রচার করছিলেন, যেখানে তিনি ন্যাশনাল কনফারেন্সের নাজির আহমেদ খান, পিপলস কনফারেন্সের এম হামজা লোন এবং ডিপিএপি নেতা নিসার আহমেদ লোনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে
লড়াই করেছেন।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর পাকিস্তান দিশেহারা হয়ে পড়েছে এবং জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্রমাগত চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্র চায় না, কিন্তু আপনাদের (জনগণ) দিকে তাকিয়ে আমি আশাবাদী যে কোনও শক্তিই এখানে গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারবে না।
তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে 'নতুন ভারত' কেবল সীমান্তের এপারে সন্ত্রাসবাদের উপরেই আঘাত হানে না, প্রয়োজনে আমরা সীমান্তের ওপারেও যুদ্ধ করতে পারি। আর সীমান্তের ওপারে যারা ভারতের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করছে, আমি তাদের স্পষ্ট করে সতর্ক করে দিতে চাই যে, ভারতে যদি বড় কোনও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হয়, 'জাহান বাইঠে হো, ওয়াহা ঘুস কর মারেঙ্গে' (তাহলে আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব এবং আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন) আঘাত হানব।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর 'ইনসানিয়ত', 'জামহুরিয়ত (গণতন্ত্র)' এবং 'কাশ্মীরিয়ত' (ভ্রাতৃত্ব)'-এর কথা উল্লেখ করে রাজনাথ সিং বলেন, যেদিন এই তিনটি জিনিস একসঙ্গে হবে, সেদিন কাশ্মীরকে কেউ আবার স্বর্গ হয়ে ওঠা থেকে আটকাতে পারবে না।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য একটি বিশেষ প্যাকেজ দিয়েছেন যা ধীরে ধীরে ৯০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
সেই গুরেজ আসনে পরাজিত হলেও ব্যবধান যথেষ্টই কম।