জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও কংগ্রেসের জোট একত্রে মোট ৯০টি আসনের মধ্যে ৪৯টি আসনে জয়লাভ করেছে। যার থেকে স্পষ্ট, 'স্পেশাল স্টেটাস' হারানোর পর উপত্যকায় প্রথম সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি বিরোধী এই জোট শক্তি।
কিন্তু, এসবের মধ্যেই অন্য আঙ্গিকেও রাজনৈতিক কাটাছেঁড়া চলছে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ বলছে, এবারের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছে মোট ২৯টি আসনে। যা আদতে ২০১৪ সালে, তাদের জেতা আসন সংখ্যার নিরিখে চারটি বেশি। উল্লেখ্য, চলতি বছরের আগে ২০১৪ সালেই শেষবার জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এই হিসেব-নিকেশের মধ্যেই সকলের নজর কেড়েছেন বিশেষ একজন। তিনি বিজেপি প্রার্থী শগুন পরিহার। ২৯ বছরের শগুন সেই তিন মহিলার মধ্যে অন্যতম, যাঁরা এবারের জম্মু-কাশ্মীর নির্বাচনে লড়েছেন এবং জয়ী হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় মহিলা ছিলেন মাত্র একজনই। তিনি এই শগুন পরিহার। পাঁচ বছর আগে সন্ত্রাসবাদী হামলায় শগুন তাঁর বাবাকে হারান। সেই একই ঘটনায় তাঁর এক নিকট আত্মীয়েরও প্রাণ গিয়েছিল।
শগুনকে কিশতওয়ার বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করেছিল পদ্ম শিবির। লড়াইটা সহজ ছিল না এই তরুণ রাজনীতিকের কাছে। তাঁর বিরুদ্ধে এক হেভিওয়েটকে প্রার্থী করেছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স।
কিশতওয়ার আসনে এনসি আস্থা রেখেছিল দলের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সাজাদ আহমেদ কিচলুর উপর। কিন্তু, শগুন তাঁকে ৫২১ ভোটে পরাজিত করেন।
নির্বাচনে জয়ী ঘোষিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শগুন বলেন, 'আমার উপর এবং আমার দলের উপর আস্থা রাখার জন্য আমি কিশতওয়ারের মানুষের সামনে মাথানত করে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁদের সমর্থনকে আমার কুর্নিশ। তাঁরা এভাবে আমার পাশে থাকায় আমি কৃতজ্ঞ।'
শগুন মনে করেন, তাঁর এই জয় কেবলমাত্র তাঁর একার নয়। এই জয় আসলে জম্মু-কাশ্মীরের জাতীয়বাদী মানুষের জয়। এই জয় 'তাঁদেরই আশীর্বাদ'।
সদ্য নির্বাচিত এই বিধায়ক জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সংশ্লিষ্ট এলাকা এবং সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা প্রদান সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি বলেন, 'মানুষের প্রতি আমার বার্তা হল, এই এলাকার শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পক্ষে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমি এই এলাকার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।'
শগুনের মতে, এই নির্বাচন হল সেই সব মানুষের জন্য যাঁরা দেশের জন্য তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বলিদান স্বীকার করেছেন। আর, এটা শুধুমাত্র তাঁর নিজের পরিবারের বিষয় নয়।
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বার্তা তুলে ধরেন শগুন। বলেন, 'যাঁরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে এবং দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে তাঁদের জীবন দান করেছেন, আমার এই জয় তাঁদের সকলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম।'
এবারের নির্বাচনে জম্মু-কাশ্মীরে শগুন ছাড়া আরও যে দুই মহিলা জয়ী হয়েছেন, তাঁরা হলেন - ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই প্রার্থী সাকিনা মাসুদ এবং শামিমা ফিরদৌস। তাঁরা যথাক্রমে - ডিএইচ পুরা এবং হাব্বাকাদাল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছেন।