কেবলমাত্র ছাত্র আন্দোলনের জেরেই বাংলাদেশে পালাবদল ঘটেছে, এমনটা মানতে নারাজ প্রবীণ বিএনপি নেতা তথা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বরং, হাসিনা সরকারের আকস্মিক পতনের নেপথ্যে তাঁর দলীয় সহকর্মীদের লাগাতার সংগ্রাম ও আত্মবলিদানকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি।
ঠিক কী বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর?
'প্রথম আলো'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছে বলেই ১৫ বছর পর হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল এবং সেটা হয়েছে।
হাসিনা সরকারের পতনে ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব কতটা?
কোটা প্রক্রিয়ার সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তা পরবর্তীতে গণ-অভ্যুত্থানের রূপ নেয় বলে দাবি হাসিনাবিরোধীদের।
যদিও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলনের রাশ পরবর্তীতে কট্টরপন্থী ইসলাম সংগঠনগুলির হাতে চলে যাওয়াতেই হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
এক্ষেত্রে আলমগীর ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করেন, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন রাজনীতির সক্রিয় সদস্যরাই। এমনকী, এক্ষেত্রে বিএনপি কর্মী ও নেতাদের অবদানও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আলমগীরের কথায়, 'আমরা রাজনীতিকরা পুরো ক্ষেত্রটা তৈরি করেছি। জুলাইয়ে এই আন্দোলন শুরুর আগে পর্যন্ত আপনারা দেখেছেন, আমরা কীভাবে আন্দোলন করেছি। এমনকী, এই জুলাইয়ে সবার আগে জেলে গিয়েছেন আমাদের লোকজন। যেদিন এই আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার পরের দিন ঢাকা শহর থেকে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান-সহ আমাদের ৯ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আন্দোলনে আমাদের হিসাব অনুযায়ী ৪২২ জন বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থক নিহত হয়েছেন।'
বিএনপি-র এই প্রবীণ নেতার ব্যাখ্যা, কোটা সংরক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ যে আন্দোলন শুরু করে, তা বৃহত্তর রূপ নিয়েছিল, কারণ হাসিনা সরকার এবং আওয়ামি লিগ এই আন্দোলনকে ঠিক মতো সামাল দিতে পারেনি।
এমনকী, আওয়ামি লিগের এই ব্যর্থতা না থাকলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন আদতে কোন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছত, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন আলমগীর।
এর থেকে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি হাসিনাপন্থীরা প্রথম থেকেই যে অভিযোগ করে আসছেন, সরকার ফেলার পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে, ঘুরিয়ে সেকথাই স্বীকার করে নিলেন প্রবীণ বিএনপি নেতা?
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই মার্কিন মুলুকে দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশের পালাবদলের নেপথ্য নায়কদের সঙ্গে বিশ্ববাসীর পরিচয় করিয়ে দেন সেদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে -
সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামি লিগ কি পুনরায় বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফিরতে পারবে?
'প্রথম আলো'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলমগীর জানিয়েছেন, আওয়ামি লিগ চাইলে অবশ্যই বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। তাদের ভোট দেওয়া হবে কিনা, সেটা বাংলাদেশের মানুষই স্থির করবে।
আলমগীরের বক্তব্য, কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার নীতিতে তাঁরা বিশ্বাস করেন না। তবে, আওয়ামি লিগের যে সদস্যরা অন্যায়, অত্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের আইনি পথে শাস্তি পেতেই হবে।
এখন দেখার প্রবীণ বিএনপি নেতার এহেন মন্তব্যের পর সত্য়িই আওয়ামি লিগ বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কিনা!