আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে - শুক্রবারই বাংলাদেশজুড়ে ক্রমশ বেড়ে চলা নারী নির্যাতন ও নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর শনিবার - অর্থাৎ - আন্তর্জাতিক নারী দিবসে (৮ মার্চ, ২০২৫) এই ইস্যুতে আরও সুর চড়ালেন তাঁরই দলীয় সহকর্মী তথা বিএনপি-র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এদিন বেলা ১১টা নাগাদ ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি-র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন রিজভী। সেখানে কোনও ভনিতা না করেই তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন! তাঁর কথায়, 'অন্যান্য অনেক দেশে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশে এখনও নারীরা নানা ধরনের বৈষম্য, হিংস্রতা ও শোষণের শিকার হচ্ছেন।'
এদিনের এই সাংবাদিক সম্মলনে প্রবীণ এই রাজনীতিকের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ-সহ বিএনপি-র অন্য নেত্রীরা।
বাংলাদেশে ক্রমশ বেড়ে চলা নারী নির্যাতন ও নারী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরব হয়ে রিজভী উল্লেখ করেন, 'নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য ও নারীদের প্রতি হিংসা দিন-দিন তীব্রতর হচ্ছে। যা আমাদের জাতির জন্য উদ্বেগের। এই কঠিন বাস্তবতায় বিএনপি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে এবং শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে নারীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, ঠিক তেমনি অনলাইনেও তাঁরা বিরূপ আচরণের শিকার হচ্ছেন। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রী, নারী শ্রমিক-সহ বিভিন্ন পেশার নারীদের ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা করা হচ্ছে। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে নারীদের হত্যা করা হচ্ছে।'
তবে, লক্ষ্যণীয় বিষয় হল - হাসিনা পরবর্তী সময়ে নারী নির্যাতনের এই বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে বড় কোনও চক্রান্ত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রিজভী। তাঁর বক্তব্য হল, বহির্বিশ্বের একটি অংশ বাংলাদেশকে অত্যন্ত রক্ষণশীল রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে এবং তাদের মদতেই কট্টরপন্থা মাথাচাড়া দিচ্ছে। আর, এই কট্টরপন্থীদের কারণেই আজ বাংলাদেশের নারীসমাজ বৈষম্য, হিংসা ও বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে।
এই বিষয়ে রিজভী বলেন, 'সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে কেন আজ নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং এর পিছনে কোনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, সেটা যাচাই করা প্রয়োজন।'
তাঁর আশঙ্কা, 'এই অসভ্যতা ও হিংস্রতার পিছনে কোনও উগ্র গোষ্ঠীর উসকানি বা মদত থাকতে পারে। তারা দেশকে অস্থির করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে এবং তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি অতিরক্ষণশীল রাষ্ট্র বানানো। যাতে নারীরা নিজের দেশেই অধিকারহীন হয়ে পড়েন!'
প্রসঙ্গত, এদিনই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মহম্মদ ইউনুস। তাঁর বার্তা, বাংলাদেশে এই অরাজকতার সৃষ্টির নেপথ্যে 'পতিত স্বৈরাচার'-এর হাত থাকতে পারে! ষড়যন্ত্রের সেই একই তত্ত্ব এবার বিএনপি নেতা রিজভীর গলাতেও শোনা গেল।