বিগত কয়েকদিন ধরেই ফের নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আওয়ামি লিগ বিরোধীদের একটা বড় অংশ পথে নেমেছে। আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বাংলাদেশিরা। এই আবহে সরকারের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রাশ করে বিবৃতি জারি করল বিএনপি। উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাস ধরে এমনিতেই নির্বাচন ইস্যুতে মহম্মদ ইউনুসের সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট বিএনপি। আর এবার বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতেও কাঠগড়ায় তোলা হল ইউনুসকে। অবশ্য এরই মধ্যে সরাসরি 'জনরোষের' বিরোধিতাও করেনি বিএনপি। বরং উলটে 'মানুষের রাগের' যথার্থতা খুঁজে পেয়েছে তারা।
বিবৃতিতে বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়েছে, 'বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের সঙ্গীদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি। সেই ক্ষেত্রে সরকার যে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ করেছে, মানুষ সেটাও দেখতে পায়নি। ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। অথচ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে। সেটাই বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল। তবে বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নানান ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে মব কালচারের মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। এই ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে।'
বিএনপি তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, 'জুলাই অগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহিদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তেমন কোনও পদক্ষেপ সরকার করেনি। পলাতক স্বৈরাচার এবং তাঁর সঙ্গীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অথচ এসব বিষয়ে কোনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এখনও প্রশাসনে ফ্যাসিস্ট শাসকের সঙ্গীরা আছেন। বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের সঙ্গীরা এখনও আছেন। পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্খা পূরণে সাফল্য অর্জন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে আমাদের মনে। গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মানুষের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলাগুলির কোনও সুরাহা হয়নি। অথচ এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের কোনও কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাঙ্খা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। তারা অন্যান্য বিষয়ে বেশি মনোযোগী। বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।'