এত দিন তাঁকে তীব্র হাসিনাবিরোধী রাজনৈতিক নেত্রী হিসাবেই দেখে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে বহু মানুষ। সেই খালেদা জিয়াকেই সম্পূর্ণ অন্য রূপে দেখা গেল বুধবার। যেন তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সর্বোময় নেত্রী বা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নন, তার থেকে অনেক বেশি তিনি একজন মা। যিনি নানা কারণে বছরের পর বছর ধরে নিজের সন্তানের থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে বুধবার লন্ডন পৌঁছন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ সাতবছর পর দেখা হয় তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের। স্বাভাবিকভাবেই একে অপরকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা-ছেলে। হুইল চেয়ারে বসে থাকা মাকে জড়িয়ে ধরেন ছেলে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক এবং তাঁর দলীয় অনুগামীরা আগেই জানিয়েছিলেন, ৭৯ বছরের নেত্রী নানা অসুখে ভুগছেন। সেই কারণেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে।
সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে, কাতার রয়্যাল এয়ার অ্য়াম্বুল্যান্সে বুধবার লন্ডন পৌঁছন খালেদা। ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই পর থেকে এটাই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর।
নেত্রীর লন্ডনে পৌঁছানো নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক তথা অধ্য়াপক এ জে এম জাহিদ হুসেন জানিয়েছেন, 'বাংলাদেশি সময় অনুসারে, বুধবার দুপুর ২টো বেজে ৫৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট এয়ার অ্য়াম্বুল্যান্সটি হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।' ডা. হুসেনের এই বার্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিএনপি-র মিডিয়া সেলের সদস্য সইদুল কবীর খান।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এদিন হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছে যান লন্ডনে বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিযুক্ত মহম্মদ হজরত আলি খান।
একইসঙ্গে, বিমানবন্দরে পৌঁছে যান খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানও। যিনি বর্তমানে বিএনপি-র কার্যনির্বাহী চেয়ারপার্সন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী জুবেইদা। বাংলাদেশের ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই একাধিক মামলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। যার জেরে প্রথমে তাঁকে জেলে থাকতে হয়। এবং পরবর্তীতে গৃহবন্দি হয়ে থাকেন খালেদা জিয়া।
তাঁর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হলেও হাসিনা সরকার তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। অন্যদিকে, তারেকের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। ফলত, তিনিও ২০০৮ সাল থেকেই লন্ডনের বাসিন্দা হয়ে থেকে গিয়েছেন।