প্রদীপ কুমার মৈত্র
মাওবাদী যোগসাজশের মামলায় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক জি এন সাইবাবা-সহ পাঁচ জনকে বেকসুর খালাস করল বম্বে হাইকোর্ট।
বামপন্থী চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভারতের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধ' ঘোষণার অভিযোগে ২০১৭ সালের ৭ মার্চ সাইবাবা ও বাকি পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় গড়চিরোলির দায়রা আদালত।
গড়চিরোলি জেলা দায়রা আদালত জেএনইউয়ের ছাত্র হেম মিশ্র, প্রাক্তন সাংবাদিক প্রশান্ত রাহি, পান্ডু নারোতে এবং মহেশ তিরকিকেও বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালের আগস্টে নাগপুরের একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে মারা যান নারোতে।
বিচারপতি বিনয় জি জোশী এবং বিচারপতি বাল্মীকি এসএ মেনেজেসের সমন্বয়ে গঠিত বম্বে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে শুনানি শেষ করে রায় সংরক্ষণের পরে মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছে।
গড়চিরোলির দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন সাইবাবা, তিরকি, মিশ্র, নারোতে এবং রাহি।
দায়রা আদালত তিরকিকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল, এবং সাইবাবা-সহ বাকি পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
দায়রা আদালতের ৮২৭ পৃষ্ঠার রায়ে সাইবাবা ও অন্যান্যদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওবাদী) এবং তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলি সহ বামপন্থী চরমপন্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
বিশেষভাবে সক্ষম ইংরেজির অধ্যাপক সাইবাবাকে ২০১৪ সালের মে মাসে মহারাষ্ট্র পুলিশ তার দিল্লির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে এবং নাগপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিল। পরে বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয়।
পরে অবশ্য ফের গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
দায়রা আদালত দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাঁকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়।
জেএনইউ-এর ধৃত ছাত্র হেম মিশ্র জেরায় দাবি করেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সিপিআই (মাওবাদী)-র তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল মুপ্পাল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি-সহ সাইবাবা ও মাওবাদী নেতাদের মধ্যে বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
২০১৩ সালে বস্তার অঞ্চলের শীর্ষ মাওবাদী নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করার সময় মিশ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় মিশ্রের দাবি সত্ত্বেও, হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মনে করে এবং মঙ্গলবার সাইবাবা-সহ সমস্ত অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মহারাষ্ট্রে নকশাল বিরোধী অভিযানের ইন্সপেক্টর জেনারেল সন্দীপ পাতিল বলেছেন যে সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে।
সাইবাবার স্ত্রী বসন্ত জিএন হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন, ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আইনি প্রক্রিয়া জুড়ে সাইবাবাকে সমর্থন করা ব্যক্তি ও মানবাধিকার কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।