বাবা পেশায় একটি দোকানে জামা কাপড় সেলাই করেন। নয়ডার ১২১ সেক্টরের হরিনারায়ণ প্রজাপতি বুঝতেই পারেননি প্রথমে যে তাঁর সন্তানের মাথায় গুলি লেগে গিয়েছে। তিনি বলছেন, ' মেয়ে শুয়েছিল বাড়ির বাইরের একটি খাটে, যখন একটা প্রচণ্ড শব্দ হয়ে যায়। আমরা বাইরে বেরিয়ে দেখি মেয়ে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।' ছোট্ট ৭ বছরের মেয়ের গুলি লেগে ব্রেন ডেড হওয়ার ঘটনার সূত্রপাত সেদিন থেকেই। আর সেই ঘটনার পর বহু চিকিৎসার পর পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রেন ডেড হওয়া সন্তানের অঙ্গদানের। যাতে উপকৃত হয় আরও ৬ জন মানুষ।
মেয়ের মাথায় যেদিন গুলি লেগেছিল, সেই দিনের বীভৎসতা আজও ভুলতে পারেননি হরিনারায়ণ। তিনি বলছেন,' আমি ভাবতেও পারিনি যে আমার মেয়ের মাথায় কেউ গুলি করতে পারে। কারণ কারোর সঙ্গে আমাদের শত্রুতা ছিল না। আমরা ছুটে যাই হাসপাতালে। তারপর নয়ডার হাসপাতাল এইমসে রেফার করে।' এরপর থেকে এইণসে চিকিৎসা চলছিল ওই ছোট্ট মেয়ের। যার মাথায় কেন গুলি করা হয়েছে, কে গুলি করেছে, তার উত্তর খুঁজে যাচ্ছেন অসহায় বাবা মা। তাঁরা শুধু জানেন, পুলিশ তদন্ত করছে তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে। এদিকে, চিকিৎসক গুপ্ত বলছেন, ভর্তির পর থেকে তাঁরা ওই ছোট্ট শিশুর অ্যাপনিয়া টেস্ট ১২ ঘণ্টার মধ্যে করেন ২ বার। যা পজিটিভ আসে। ধীরে ধীরে বোঝা যায় পরিস্থিতি কোনদিকে যেতে চলেছে। তারপরই মেয়েটির অভিভাবকের কাউন্সেলিং করেন চিকিৎসকরা। এরপর শুক্রবার ওই ছোট্ট শিশুর লিভার, দুটি কিডনি, করনিয়া, হার্টের ভালভ অঙ্গগুলি দান করা হয় অসুস্থ ছয়জনকে। যে অঙ্গগুলি প্রতিস্থাপিত হয়ে ওই ৬ জন ফিরে পেতে চলেছেন তাঁদের স্বাভাবিক জীবন। আরও পড়ুন-তাপপ্রবাহ শরীরে কোন ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে? ভয়াবহ অসুস্থতা কাটাতে কিছু টিপস
চিকিৎসকরা বলছেন, মৃত্যুর পর অঙ্গদান ভারতের মতো দেশে অত্যন্ত কম হারে রয়েছে। পরিবারের এমন ধরনের সাহসী বলিষ্ঠ পদক্ষেপ অনেককে অনুপ্রাণিত করতে পারে। চিকিৎসক গুপ্ত বলছেন, 'ভারতে বহু অসুস্থ রোগীর অঙ্গের চাহিদা রয়েছে। আর সেই চাহিদার হার খুবই বেশি।' এমন চাহিদার হার মেটাতে এই ধরনের পদক্ষেপ খুবই অনুপ্রেরণা মূলক বলে দাবি করছেন চিকিৎসক। অঙ্গদানের সিদ্ধান্তের পর হরিনারায়ণ প্রজাপতি বলছেন, 'আমরা ভেবেছিলাম প্রথমে এই অঙ্গদানের সিদ্ধান্তের কথা জানলে আমাদের আত্মীয়রা কী বলবেন, তবে তারপরই চিকিৎসকরা এত ভালভাবে বিষয়টি তুলে ধরেন, বলেন যে কীভাবে আরও ছয় জন মানুষ এতে উপকার পাবেন, সেকথা ভেবে আমরা রাজি হয়ে যাই।'