প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল ভারত। তবে ভারত সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে ১৭৫৭ সালের পর থেকে। এরপরেই ভারত থেকে সম্পদ লুট করতে শুরু করে ব্রিটিশরা। ১৭৬৫ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা যে পরিমাণ সম্পদ লুট করেছে তা জানলে কার্যত চোখ কপালে উঠে যাবে। সম্প্রতি, একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ১৩৫ বছরে ভারত থেকে ৬৪.৮২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ লুট করেছে ব্রিটিশরা। আর এই সম্পদের মধ্যে ৩৩.৮০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার দখল করে রেখেছেন বৃটেনের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তিরা। শুধু তাই নয়, রিপোর্টে বলা হচ্ছে এই অর্থের পরিমাণ এতটাই বেশি যে গোটা লন্ডন শহরকে ৫০ পাউন্ড মূল্যের নোট দিয়ে চার বার বিছানো সম্ভব।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ টেলিকম গ্রুপের ২৪.৫ শতাংশ শেয়ার কিনবে ভারতী এন্টারপ্রাইজ, বড় মাইলফলক!
প্রতিবছর এই সংস্থার তরফে রিপোর্ট পেশ করা হয়। এবার এই সংস্থার তরফ প্রতিবেদনটি ‘টেকার্স, নট মেকার্স’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভার প্রথম দিনে প্রতি বছর এই রিপোর্ট পেশ করা হয়। এবারও বিশ্বব্যাপী ধনী ও ক্ষমতাবানদের বার্ষিক সভা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবার রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানি শুধুমাত্র উপনিবেশবাদের ধারণা থেকে তৈরি হয়েছে। সেই সময় বৈষম্য এবং লুটপাটের প্রবণতা বর্তমানে আধুনিক জীবনেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে চলেছে।এটি এমন একটি বিশ্ব তৈরি করেছে যা বিশ্ব বর্ণবাদের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন। দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের উপকার করার জন্য পদ্ধতিগতভাবে সম্পদ লুট করেছে।
বিভিন্ন গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে সংস্থার তরফে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। অক্সফামের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেকে একটি স্বতন্ত্র আইনি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। বহু ঔপনিবেশিক অপরাধ তাদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। বর্তমানে এই কোম্পানিগুলির মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ে দক্ষিণ গোলার্ধের শ্রমিকদের শোষণ করে। এর থেকে উত্তর গোলার্ধের ধনী ব্যক্তিরা লাভবান হয়ে থাকেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৭৬৫ সাল থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে উপনিবেশিকতার সময় যুক্তরাজ্যের ভারত থেকে আহরণ করা অর্থ ধনী ছাড়াও ভাগ হয়েছিল উপনিবেশিকতার প্রধান সুবিধাভোগীদের মধ্যে। যাদের মধ্যে ছিলেন উদীয়মান মধ্যবিত্ত। এছাড়াও, ১৭৫০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্বব্যাপী শিল্পের ২৫ শতাংশ উৎপাদন হতো। তবে ১৯০০ সাল থেকে তা হ্রাস পেতে শুরু করে। এই সংখ্যাটি অবিলম্বে নেমে দাঁড়ায় ২ শতাংশে। মূলত এই পতনের জন্য ব্রিটেনের কঠোর রক্ষণশীল নীতিকেই দায়ী করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, এশিয়ার বস্ত্র শিল্পের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ভারতের শিল্প বিকাশকে বাধা দেওয়া হয়েছিল সেই সময়। এছাড়াও, ১৭৫৭ সাল থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পূর্ব ভারতের আফিম উৎপাদনকে নিজেরা অধিকার করে নেয় । সেই আফিম চিনে রফতানি করা হত।