‘অকৃত্রিম বন্ধু’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলাদেশ। তেমনই শোকের ছায়া ওপার বাংলার নড়াইলে। সেখানে চিত্রা নদীর ধারে ভদ্রবিলা গ্রামে ছিল প্রণববাবুর শ্বশুরবাড়ি। প্রথমবার এসেছিলেন ২০১৩–র ৫ মার্চ। তাও রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশ সফরে, স্মৃতি আউড়ে বলছিলেন প্রণববাবুর শ্যালক কানাইলাল ঘোষ।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘দুপুরের তাঁর খাওয়ার সব আয়োজন করে রেখেছিলাম। কিন্তু প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে এসে তেমন কিছুই খাননি তিনি। কোনও ক্রমে নাকে–মুখে খেয়েই ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পড়ে তাঁর মুখেই জানতে পারি সেদিন তাঁর খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া কোনওদিনই বেশি খাওয়া–দাওয়া করতে পছন্দ করতেন না আমার জামাইবাবু।’
উল্লেখ্য, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়রা ৪ ভাই ৪ বোন৷ সকলেই একের পর এক ভারতে চলে আসেন। বাংলাদেশে পৈতৃক ভিটে আঁকড়ে থেকে যান ছোট ভাই কানাইলাল ঘোষ৷
জামাইবাবু কেমন ছিলেন জানতে চাইলে বিনা দ্বিধায় কানাইবাবু বলেন, ‘আমার দিদির চেয়েও জামাইবাবু বেশি ভাল ছিলেন৷ কলকাতার কাছে ভাণ্ডারহাটি এলাকায় মায়ের কাছে আমি প্রায়ই যেতাম৷ আসতেন দিদি–জামাইবাবুও৷ আমরা তিনজন ঘুরে বেড়াতাম৷ আমার দাদাবাবু অমায়িক লোক৷ ওঁর মতো মানুষ হয় না৷’
কানাইবাবুর আক্ষেপ, করোনা, কলডাউনের জেরে বিমান বন্ধ থাকায় তাঁর প্রিয় দাদাবাবুকে শেষ দেখা দেখা হল না। তিনি জানান, এর আগে বহুবার দিল্লি গিয়ে প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিবারই নড়াইলের খবর নিতেন তাঁর জামাইবাবু। বাংলাদেশের কথা, বাংলাদেশের মানুষের কথা জানতে চাইতেন।
কানাইবাবু বলছিলেন, ‘দিদির (শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়) অনুরোধে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রীদের জন্য হস্টেল করে দিয়েছিলেন জামাইবাবু। নড়াইলের সাধারণ মানুষের জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।’ তাঁর আক্ষেপ, ‘কিন্তু কোনও অজানা কারণে সেটি এখনও তৈরি হল না।’ তৈরি হলে প্রণববাবু আরও আপন হয়ে যেতেন বাংলাদেশের, নড়াইলের মানুষের কাছে।