যে কোনও ফিল্মের কাহিনিকেও হার মানাতে পারে বাস্তবের মাটির এই মন ছুঁয়ে নেওয়া ঘটনা। দেশভাগের সময় ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত বহুবার দেখেছে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। তবে এবার সেই সীমানায় কার্তারপুর দেখল বিচ্ছেদ কাটিয়ে পুর্নমিলনের আনন্দাশ্রু! এই ঘটনা হাবিব ও সিদ্দিকের। যে দুইভাইকে বিচ্ছিন্ন করেছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগ।
১৯৪৭ থেকে ২০২১ , মাঝখানের সময়ে সিন্ধু-শতদ্রু দিয়ে বয়ে গিয়েছে জল। দেশভাগের কাঁটা তারের বেড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়েছেন ততদিনে বহু মানুষ। বিচ্ছিন্ন হয়েছে বহু ভাই। এমনই দুই ভাই সিদ্দিক ও হাবিব। বর্তমানে সিদ্দিক পাকিস্তানের ফৈজলাবাদের বাসিন্দা। আর হাবিব থাকেন পঞ্জাবের ফুল্লানওয়ালে। আর দুই ভাই ৭৪ বছর পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন কার্তারপুর করিডরে। ভারত-পাক সীমান্ত লাগোয়া, পাকিস্তানের গুরু দরবার সাহিবে এই মিলন দৃশ্য ততক্ষণে আনন্দাশ্রু এনে দিয়েছে বহুজনের চোখে। জানা যায়, দেশভাগ যখন হয়েছিল, তখন সিদ্দিক খুবই ছোট। সে পাকিস্তানে বড় হতে থাকে। আর বাবার সঙ্গে ভারতের বুকে বেড়ে উঠতে থাকে বড় ভাই হাবিব। ফের একবার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে উচ্ছ্বসিত হাবিব ফিরে যান ছোটবেলার কথায়। প্রবীণ এই ভারতীয় প্রশংসা করেন এমন মিলনের নেপথ্যে থাকা উদ্যোগের। ভাইকে জানান, এই করিডর দিয়েই ফের তাঁরা দেখা করবেন। দুই ভাই ভারত ও পাকিস্তানের সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। ভিসা-হীনভাবে এই সাক্ষাতে পাকিস্তান সরকারের অনুমোদনকেও স্বাগত জানান হাবিব।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ৪.৭ কিলোমিটারের কার্তারপুর করিডরকে ফের একবার খুলে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেয় মোদী সরকার। উল্লেখ্য, এরপর কোভিডের জেরে সেই রাস্তা বন্ধ হয়। আর সেই কার্তারপুরই সদ্য সাক্ষী রইল এক বিরল দৃশ্যের। যে ভারত-পাক সীমান্ত, বহু রক্তস্নাত অধ্যায়, বহু বিচ্ছেদের আর্তনাদের সাক্ষী, সেই সীমান্তেই আবারও পুর্নমিলনের আনন্দাশ্রু ঝরে পড়ল। বহুদিন বিচ্ছেদে থাকা দুই ভাই একে অপরকে ছুঁয়ে দেখা, জড়িয়ে ধরার আনন্দে , ছোটবেলার গল্পে যখন মশগুল, তখন ভারত-পাক সীমান্ত নিজের অজান্তেই লিখে ফেলল আরও এক নতুন গাথা। এবার তা বিচ্ছেদের নয়, মিলনের।