ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ রুখতে এক অনবদ্য ব্যবস্থা করেছে বিএসএফ। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের তিন বিঘা এলাকার একাংশের কাঁটাতারে কাচের বোতল বেঁধে রেখেছে তারা।
কেন এমন ব্যবস্থা? কারণ, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা এপারে ঢুকতে গেলেই সেই বোতলে ধাক্কা লেগে আওয়াজ হবে। আর সেই শব্দই 'বিপদ ঘণ্টা' বা 'ওয়ার্নিং অ্য়ালার্ম'-এর মতো কাজ করবে। সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে যাবে বিএসএফ।
তথ্য বলছে, শীতের এই সময়টায় কোচবিহারের এই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রাত নামতে না নামতেই জমাট কুয়াশায় কার্যত ঢাকা পড়ে যায়। এমনকী, দু’হাত দূরের জিনিসও ঠিক মতো দেখা যায় না।
দৃশ্যমানতা এই মারাত্মক হারে কমে যাওয়ায় সীমান্ত পাহারা দিতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েন বিএসএফ জওয়ানরা। সেই কারণেই কাঁটাতারের বেড়ায় কোথাও কাচের বোতল, আবার কোথাও টিনের কৌটো বেঁধে রেখেছেন তাঁরা। যাতে সামান্য এদিক-ওদিক কিছু হলেই বিপদের শব্দ সঙ্কেত পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, কোচবিহারের এই মেখলিগঞ্জের তিন বিঘা এলাকার সীমান্তে ভারতের দিকে শেষ যে গ্রামটি রয়েছে, তার নাম আন্দারান খড়খড়িয়া। তার ঠিক উলটো দিকেই আছে বাংলাদেশের আংড়াপোতা দহগ্রাম।
এত দিন এই দুই গ্রামের মাঝের অংশ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ছিল। কোথাও কোনও কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। কিন্তু, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা ওই গোটা এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলার দাবি করেছিলেন।
শেষমেশ গত ১০ জানুয়ারি, ভারতের দিকে থাকা গ্রামের বাসিন্দারাই জিরো পয়েন্ট ঘেঁষে লোহার খুঁটি পুঁতে দেন। তারপর সেই খুঁটির সঙ্গে কাঁটাতার লাগিয়ে বেড়া দেন তাঁরা। সেই সময় তেড়ে আসে বিজিবি। এমনকী, সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা, সাধারণ বাংলাদেশিরাও কাঁটাতারের বেড়া দিতে আপত্তি করেন। পরবর্তীতে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে এই এলাকার প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হলেও বাকি প্রায় ৩ কিলোমিটার সীমান্ত এখনও উন্মুক্তই রয়ে গিয়েছে।
তার মধ্য়েই সীমান্ত এলাকার যেটুকু অংশে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হয়েছে, সেই অংশটুকুর সুরক্ষা আরও কিছুটা বাড়াতে কাঁটাতারের মধ্যেই কাচের বোতল ও টিনের কৌটো লাগিয়ে দিয়েছে বিএসএফ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় সবথেকে বেশি আতঙ্কে থাকেন তাঁরা। কারণ, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা রাতের অন্ধকারে তাঁদের গবাদি পশু, ক্ষেতের ফসল চুরি করে নিয়ে যায়। শীতের সময় এইসব অত্য়াচার আরও বাড়ে।