কোভিড অতিমারীর জেরে পড়ুয়াদের শিক্ষায় ব্যাপক বাধা এবং স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যেই ২০২২ সালের জন্য শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ অর্থের থেকে ৬,০০০ কোটি টাকা ছেঁটে দিল কেন্দ্রীয় সরকার।
২০২০-২১ কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ ৯৯,৩১১ কোটি টাকা থেকে ৬% ছাঁটাই করায় ৯৩,২২৪ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে, যা গত তিন বছরের হিসাবে নিম্নতম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫,০০০ কোটি ছেঁটে দেওয়া হয়েছে স্কুলশিক্ষা খাতে। উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ অর্থ থেকে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা বাদ দেওয়ায় চলতিবছরের জন্য মোট বরাদ্দ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮,৩৫০ কোটি টাকা।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এ বছর থেকেই নতুন শিক্ষানীতি (NEP) চালু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। নয়া নীতিতে শিক্ষা খাতে সরকারের অধিক বরাদ্দের জন্য জোরদার সুপারিশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রের সমগ্র শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে অর্থ মন্ত্রক বরাদ্দ করেছে ৩১,০৫০ কোটি টাকা, যা গত বছরে ছিল ৩৮,৭৫০ কোটি টাকা। তবে মিড ডে মিল প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর ফলে বর্তমানে এই খাতে মোট বরাদ্দ হয়েছে ১১,৫০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও নবোদয় বিদ্যালয়ের মতো কেন্দ্রীয় স্কুলগুলির ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১,২৮৪ কোটি এবং ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া এনজিও সহায়তায় ১০০টি নতুন সৈনিক স্কুল, বেসরকারি স্কুল ও রাজ্য সরকারি স্কুল চালু করা হবে বলেও ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
অতিমারীর কারণে কমপক্ষে ছয় মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকলেও শিক্ষৈালাভের ক্ষেত্রে লোকসান, নতুন করে ছাত্র ভরতির জন্য প্রচার বা স্কুলছুটদের ফেরাতে কোনও সরকারি উদ্যোগের ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
উচ্চশিক্ষা তহবিল সংস্থার (HEFA) বরাদ্দেও কাটছাঁট করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ বছর সংস্থার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১ কোটিটাকা, যা ২০২০-২১ সালের বাজেটে ছিল ২,১০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের বাজেটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ঘোষিত এবং ২০১৭ সাল থেকে বাস্তবায়িত এই প্রকল্প তৈরি হয়েছিল বাজার থেকে টাকা তুলে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিকাঠামো গঠনের জন্য ১০ বছর মেয়াদী ঋণ দেওয়ার জন্য। ২০১৮ সাল থেকে বাজেটে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সম্প্রসারণের পরিবর্তে HEFA প্রকল্পে পরিকাঠামো গড়ার জন্য ঋণ দেওয়া শুরু করে কেন্দ্র।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর সোমবারের বাজেট ভাষণে পুরনো কিছু প্রকল্পের কথা ফের ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় উচ্চ শিক্ষা কমিশন ((HECI) ও জাতীয় গবেষণা ফাউন্ডেশন (NRF) গঠন, যা ২০১৯-২০ সালের বাজেটেও জানিয়েছিলেন সীতারামন। এবারের বাজেটে NRF এর জন্য পাঁচ বছরে ৫০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন তিনি।
নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু হলে প্রথম বছরে অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট (ABC) উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই ব্যবস্থাচালুকরতে আপাতত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, দেশের নয়টি শহরে সরকারি সাহায্যে চলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে একটি মঞ্চ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। উচ্চশিক্ষা সচিব জানিয়েছেন, লাদাখে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জন্য সংসদে নতুন বিল পাশ করাবে কেন্দ্র।