বড়সড় কোনও রেল নয়া প্রকল্পের ঘোষণার রাস্তায় হাঁটল না নরেন্দ্র মোদী সরকার। বরং ভবিষ্যতের পরিকাঠামোর জন্য ‘রেকর্ড’ ১১০,০৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। সঙ্গে আয়ের পথ সুগম করতে একাধিক ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরির ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
(একনজরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট ২০২১ বক্তৃতা)
শুধুমাত্র ঘোষণার খাতিরে বাজেটে একগুচ্ছ নয়া রেল প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা আগেই ছেড়েছে মোদী সরকার। সেই রেশ ধরে এবারের বাজেটেও রেলের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে আগামী অর্থবর্ষে রেলে ১১০,০৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১.০৭ লাখ কোটি টাকা মূলধনী খাতে ব্যয় করা হবে। সীতারামন বলেন, ‘জাতীয় রেল পরিকল্পনা ২০৩০ তৈরি করেছে ভারতীয় রেল। সেই পরিকল্পনার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি রেলের কাঠামো তৈরি করা হবে।’
আরও পড়ুন : চাপল ১০০ শতাংশ কৃষি সেস, তবুও বাড়ছে না বিদেশি মদের দাম
পণ্য পরিবহনের উপর জোর দিয়ে বাজেটে আয়ের পথ সুগমেরও চেষ্টা করেছেন নির্মলা। বিশেষত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত লকডাউনের জেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে রেল। গত মার্চ থেকে স্বাভাবিক যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা বন্ধ আছে। প্রাথমিকভাবে ধাক্কা খেয়েছিল পণ্য পরিবহন। যদিও পরে সেই ঝাঁকুনি কাটিয়ে পণ্য পরিবহন করে আয় বেড়েছে রেলের। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের থেকেও গত ডিসেম্বরে রেলে পণ্য ওঠানামার পরিমাণ বেড়েছে। তার রেশ ধরেই সীতারামন জানান, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র জন্য দেশের বিভিন্ন শিল্প মহলের জন্য পণ্য পরিবহন খরচ কমিয়ে আনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর পুরোপুরি চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর চালু হওয়ার কর্মকাণ্ড এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেগুলি থেকে টাকা আয় করবে রেল। বর্তমানে রেলের হাতে যে পরিকাঠামো আছে, তা থেকে আয় করার বিষয়টি নয়া পরিকাঠামো তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ সেজন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সীতারামন।
আরও পড়ুন : সড়ক, রেল, চা-বাগান - ভোটের আগে বাজেটে কী কী 'উপহার' পেল বাংলা?
আগামী অর্থবর্ষে পিপিই মডেলে ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরে সোননগর-গোমো শাখা (২৬৩.৭ কিলোমিটার) চালু করা হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে ২৭৪.৩ কিলোমিটারের গোমো-ডানকুনি শাখাও চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন সীতারান। একইসঙ্গে বাজেটে প্রস্তাবিত খড়্গপুর-বিজয়ওয়াড়া ইস্ট-কোস্ট ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর, ভুসওয়াল-খড়্গপুর-ডানকুনি ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর এবং ইটারসি-বিজয়ওয়াড়া উত্তর-দক্ষিণ করিডরের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে সেই তিনটি করিডরের বিস্তারিত রিপোর্ট দেখা হবে। এছাড়াও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ১০০ শতাংশ ব্রডগেজ লাইনের বৈদ্যুতিকরণের কাজ শেষ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সীতারামন।
আরও পড়ুন : মোবাইল, এসি-সহ কোন কোন জিনিসের দাম বাড়ছে? কোন দ্রব্যের দাম কমছে?
বাজেটে রেলের বরাদ্দ নিয়ে শার্দুল অমরচাঁদ মঙ্গলদাস অ্যান্ড কোম্পানির সহযোগী দীপ্ত রায় জানান, দক্ষতা বাড়ানো এবং পরিবহনের খরচ কমানোর ক্ষেত্রে এবারের বাজেটের ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যা প্রত্যক্ষভাবে ঘরোয়া উৎপাদন এবং বাণিজ্যের কেন্দ্রে ছাপ তৈরি করবে। ফ্রেট করিডর খুলে দেওয়া এবং তা থেকে আয়ের যে পরিকল্পনার প্রস্তাব আছে, তাতেও আশার আলো দেখছেন তিনি।