সাধারণ বাজেট পেশের পর দেড়দিন কেটে গিয়েছে। তবে থামছে না হিসাব। এবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে নয়া কর কাঠামো ২.০-র ঘোষণা করেছেন, তাতে বেশি লাভ হবে নাকি পুরনো কর কাঠামোয় করদাতাদের বেশি লাভ হবে, তা নিয়ে জোরকদমে হিসাব চলছে। নয়া কর কাঠামো ২.০-তে যেমন আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়েছে, তেমনই করের স্তর কমিয়ে ফেলা হয়েছে। আছে ৫০,০০০ টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনও। তবে পুরনো কর কাঠামোতেও ৮০সি, ন্যাশনাল পেনশন স্কিমে বিনিয়োগ, হাউস রেন্ট অ্যালোওয়েন্সের মতো সুযোগ-সুবিধা আছে।
নয়া আয়কর কাঠামো
এবার বাজেটে আয়করের সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়ে সাত লাখ টাকা করা হয়েছে। আগে যা পাঁচ লাখ টাকা ছিল। সেইসঙ্গে নয়া কর কাঠামোর ঘোষণা করা হয়েছে। ওই কাঠামো অনুযায়ী, শূন্য থেকে ৩ লাখ টাকা বার্ষিক আয় হলে কোনও আয়কর দিতে হবে না। তিন লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় হলে পাঁচ শতাংশ কর দিতে হবে। ছয় লাখ টাকা থেকে নয় লাখ টাকা আয় হলে কর দিতে হবে। তারপর নয় লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, ১২ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকায় ২০ শতাংশ এবং ১৫ লাখ টাকার বেশি আয়ে ৩০ শতাংশ কর ধার্য হতে চলেছে। সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ করের হার কমিয়ে ৩৯ শতাংশ করা হয়েছে।
পুরনো কর কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। নয়া কর কাঠামো ২.০-র ভিত্তিতে করের হারের বিষয়ে 'হিন্দুস্তান টাইমস' গ্রুপের 'লাইভ মিন্ট'-র হয়ে কলম ধরেন Vilato Partners-র পার্টনার রবি জৈন। তথ্য সহায়তা করেন Vilato Partners-র অধিকর্তা বিকশ নারাং। কী পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা, তা দেখে নিন -
যাঁদের বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ টাকা, তাঁদের পুরনো বা নয়া কর কাঠামো ১.০-র (২০২০ সালের বাজেটে ঘোষণা) আওতায় কোনও কর দিতে হয় না। নয়া কর কাঠামো ২.০-তে (২০২৩ সালের বাজেটে ঘোষণা) সেই সীমা বাড়িয়ে সাত লাখ টাকা করা হয়েছে। যে বেতনভোগী কর্মীদের আয় বার্ষিক ৭.৫ লাখ টাকা, তাঁরা ৫০,০০০ টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ক্লেম করলে তাঁদের কোনও কর দিতে হবে না।
আয়ের বিভিন্ন স্তরে পুরনো কর কাঠামো, নয়া কর কাঠামো ১.০ এবং নয়া কর কাঠামো ২.০-তে সম্ভাব্য কত টাকা কর বেঁচে যেতে পারে, তা দেখে নিন -
যাঁদের বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার মধ্যে হবে, তাঁরা পুরনো কর কাঠামোর থেকে নয়া কর কাঠামো ২.০-র আওতায় এসে ৬৫,০০০ টাকা থেকে ৮৭,৭৫০ টাকার মধ্যে কর বাঁচাতে পারে। আবার ধরা যাক, কারও আয় ছয় কোটি টাকা, তাহলে ২৩ লাখ টাকার মতো অর্থ বাঁচাতে পারবেন ওই করদাতা।
একইভাবে যে করদাতাদের বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার মধ্যে হতে চলেছে, তাঁরা নয়া কর কাঠামো ১.০ (২০২০ সালের বাজেটে ঘোষণা করা হয়) থেকে নয়া কর কাঠামো ২.০-র (২০২৩ সালের বাজেট অনুযায়ী) আওতায় এলে ৪৯,৪০০ টাকা থেকে ৬৮,২৫০ টাকা কর বাঁচাতে পারবেন। ধরা যাক, কারও বার্ষিক আয় ছয় কোটি টাকা হচ্ছে, তাহলে তাঁর সঞ্চয়ের পরিমাণ ঠেকবে ২২.৫ লাখ টাকার মতো।
সেইসঙ্গে এবারের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে নয়া কর কাঠামো ২.০-র আওতায় যাতে মানুষ কর দেন, সেই লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। তবে যাঁরা চাইবেন, তাঁরা পুরনো কর কাঠামোয় থাকতে পারবেন। তা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে যে ধাপে-ধাপে পুরনো কর কাঠামো তুলে নয়া কর কাঠামো ২.০-তে সরে যেতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার।
কাদের জন্য কোন কর কাঠামো বেশি সাশ্রয়ী হবে?
এটা স্পষ্ট, যাঁদের আয় পাঁচ কোটি টাকার বেশি, তাঁরা নয়া কর কাঠামো ২.০-য় অত্যন্ত লাভবান হবেন। কিন্তু যে করদাতাদের আয় পাঁচ কোটি টাকার কম, তাঁদের কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হতে পারে। ৮০সি ধারার আওতায় ১.৫ লাখ টাকা, ৫০,০০০ টাকার ন্যাশনাল পেনশন প্রকল্পে বিনিয়োগ, হাউস রেন্ট অ্যালোওয়েন্স (এইচআরএ), লিভ ট্র্যাভেল অ্যালোওয়েন্স (এলটিএ)-সহ অন্যান্য ছাড়ের বিষয়টি হিসাব করে দেখলে পুরনো কর কাঠামো বেশি লাভজনক হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি পুরনো কর কাঠামোয় সামান্য বাড়তি সুযোগ মেলে এবং করদাতা যদি ডিডাকশন ক্লেম করা ও বিনিয়োগের ঝক্কি পোহাতে না চান, তাহলে নয়া কর কাঠামো ২.০ বেছে নিতে পারেন।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: 'হিন্দুস্তান টাইমস' গ্রুপের 'লাইভ মিন্ট'-র হয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছেন Vilato Partners-র পার্টনার রবি জৈন। তথ্য সহায়তা করেছেন Vilato Partners-র অধিকর্তা বিকশ নারাং)।
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)