অর্ধেক পোড়া থোক-থোক ৫০০ টাকা নোট পড়ে আছে। উড়ছে ধোঁয়া। তারইমধ্যে একটা উঁচু জায়গা থেকে টেনে বস্তার অংশবিশেষের মতো নামাচ্ছেন এক ব্যক্তি। যিনি দমকল বাহিনীর মতো পোশাক পরে আছেন। আর তিনি যা নামালেন, তার মধ্যে থেকেও কিছু নীচে পড়ে গেল।
দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবন থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের যে অভিযোগ উঠেছে, সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের তরফে এমনই ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ করা হল। যেগুলি গত ১৪ মার্চ রাতে বিচারপতি বর্মার বাসভবনে তোলা হয়েছে বলে দিল্লি পুলিশের তরফে দাবি করে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবেন্দ্রকুমার উপাধ্যায়কে দেওয়া হয়েছে। সেই ভিডিয়োগুলির পাশাপাশি বিচারপতি বর্মার প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তরফে।
দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নির্দেশের ভিত্তিতে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি একটি রিপোর্ট দাখিল করেছেন। আর সেটাই প্রকাশ করা হয়েছে। দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ১৫ মার্চ বিকেল ৪ টে ৫০ মিনিট নাগাদ দিল্লির পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরার থেকে ফোন পান। তিনি জানান যে ১৪ মার্চ রাত ১১ টা ৩০ মিনিট নাগাদ বিচারপতি বর্মার অফিসের স্টোররুমে আগুন লেগে গিয়েছিল। তাঁকে কয়েকটি ভিডিয়ো এবং ছবিও পাঠানো হয়েছিল বলে জানান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন আছে, মত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির
দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জানান, দিল্লির পুলিশ কমিশনার দাবি করেছেন যে যেখানে আগুন লেগেছিল, সেই রুমের ধ্বংসস্তূপ এবং অন্যান্য পোড়া জিনিস বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর সেই তথ্যটা বিচারপতি বর্মার বাসভবনে মোতায়েন থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের থেকে জেনেছেন। দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, তিনি যে প্রাথমিকভাবে তদন্ত চালিয়েছেন, তাতে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে যে বাংলোয় থাকা লোকজন, পূর্ত দফতরের লোকজন, পরিচারক, মালি ছাড়া কারও ওই ঘরে ঢোকার সম্ভাবনা নেই। সেই পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
কোনও টাকা রাখিনি, দাবি বিচারপতি বর্মার
যদিও বিচারপতি বর্মা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দিল্লির প্রধান বিচারপতিকে পাঠানো চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, ‘দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি যে আমি বা আমার পরিবারের কোনও সদস্য কখনও ওই স্টোররুমে কোনও নগদ টাকা রাখেনি। ওই নগদ টাকা যে আমাদের বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটারও তীব্র নিন্দা করছি।’
তিনি দাবি করেছেন, কেউ এরকম একটা স্টোররুমে যে নগদ রেখে দেবেন, সেই বিষয়টি ভাবাই অবিশ্বাস্য। কারণ ওখানে ওটা খোলা ছিল। যে কেউ যাতায়াত করতে পারতেন। আর তিনি যেখানে থাকেন, তার সঙ্গে ওই রুমের কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করেন বিচারপতি বর্মা।
ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত, দাবি বিচারপতি বর্মার
সেইসঙ্গে যেখানে আগুন লেগেছিল, সেখান থেকে নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, তারও বিরোধিতা করেছেন বিচারপতি বর্মা। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর বাসভবনের কোনও সদস্যকে দেখানো হয়নি যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বরং তাঁকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিচারপতির বর্মা।