'তখন আমার ৬ বছর বয়স। স্কুলের আর পাঁচ জনের থেকে আমি যেন আলাদা। সেই তখন থেকেই মা পাশে থেকেছেন,' বললেন প্রীতু। পুরো নাম প্রীতু জয়প্রকাশ। চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট প্রীতু জয়প্রকাশ।
জীবনের সূচনা থেকে বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার কঠিন পরীক্ষা। সেটার পরে দেশের অন্যতম কঠিন প্রবেশিকা ও কোর্স। এই দুই অসম যুদ্ধে দারুণভাবে জয়ী কেরালার অগ্নিকন্যা। আর সেই কারণেই এখন দেশ তথা বিশ্বের সকলের অনুপ্রেরণা তিনি।
১৯৯৪ সালে কুট্টুনাডুতে জন্ম প্রীতুর। ৬ মাস বয়সেই তার একটি বিরল জিনগত রোগ ধরা পড়ে। স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রপি টাইপ টু। যার কোনও চিকিত্সা হয় না।
রোগের কবলে দ্রুত ওজন কমে যায় তাঁর। সেই সঙ্গে অস্থির গঠনেও সমস্যা দেখা দেয়। নড়াচড়ার জন্যও কারও সাহায্যের প্রয়োজন।
৬ বছর বয়স পর্যন্ত যদিও নিজের এই পরিস্থিতির কথা বুঝতেও পারেনি প্রীতু। 'স্কুলে গিয়েই বুঝতে পারলাম, আমি একজন স্পেশাল চাইল্ড,' বললেন তিনি। স্কুলে তাঁর বেঞ্চে পাশেই সব সময়ে তাঁর মা বসে থাকতেন।
সেই ছোট্ট বয়স থেকেই মেধায় সকলের নজর কাড়েন তিনি। বিজ্ঞান ও কুইজে দক্ষতার জেরে স্কুলের হয়ে একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ও জয়ী হন।
এরপরে তাঁকে একটি দূরবর্তী স্কুলে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে রোজ যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না। তাই বাড়িতেই পড়াশোনা করতে থাকেন। তবে পরীক্ষা দিয়েছেন নিয়মিত। দুর্দান্ত ফলও করেছেন।
এমনকি তীব্র শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া সত্ত্বেও কোনও রাইটার নিতেন না। বোর্ড পরীক্ষাও দেন নিজের হাতে।
দ্বাদশে তাঁর বিষয় ছিল কমার্স। এরপর বি কম পাশ করেন। তাঁর স্নাতকের নম্বর শুনলে যে কারও চোখ কপালে উঠবে(৯৬%)।
এরপরে চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টের প্রবেশিকার প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। বাড়ির কাছে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় দূরবর্তী স্থানে গিয়ে থাকতে শুরু করেন মা-বাবার সঙ্গে।
সিএ পরীক্ষায় কোনও কোনও অঙ্কের সমাধান প্রায় ১০ পাতা দীর্ঘ। সেই কারণে একজন রাইটার বা স্ক্রাব রাখতে বাধ্য হন প্রীতু। তাঁরই এক বন্ধু সাহায্য করেন।
অসুস্থ, অশক্ত শরীরে লাগাতার পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস। সাফল্যের চাবিকাঠি হিসাবে এগুলিরই কথা বললেন সিএ প্রীতু জয়প্রকাশ।