একদিকে একের পর এক বিদেশি পণ্য়ের উপর মোটা শুল্ক চাপিয়ে গোটা বিশ্বের একটা বড় অংশের অর্থনীতিকে কার্যত মুঠোবন্দি করার চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই প্রেক্ষাপটে পালটা মার্কিন পণ্য়ের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর পথে অগ্রসর হয়েছে অন্যান্য দেশও। কেউ কেউ আবার এখনও সব ধরনের সম্ভাবনার পথ খুলে রেখেছে। ফলত - আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপজুড়ে শুল্ক যুদ্ধ এক অভাবনীয় মোড় নিয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, এই বিষয়ে কার কী অবস্থান দেখে নেওয়া যাক।
কানাডার পদক্ষেপ:
ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক বাণের জবাব দিতে বুধবার (১২ মার্চ, ২০২৫) পালটা মার্কিন পণ্য়ের উপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য করেছে কানাডার সরকার। কানাডিয়ান ডলারের হিসাবে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০ বিলিয়ন (২০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। উল্লেখ্য, এর ঠিক আগেই ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের আমদানির উপর নয়া শুল্ক (গ্লোবাল লেভি) জারি করার কথা ঘোষণা (২৫ শতাংশ) করেছিল মার্কিন প্রশাসন।
কানাডার অর্থমন্ত্রী ডমিনিক লিব্ল্যাঙ্ক জানিয়েছেন, তাঁদের সরকার যে পালটা শুল্ক ঘোষণা করেছে, তা কেবলমাত্র মার্কিন ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যকেই প্রাভাবিত করবে, তা নয়। সেইসঙ্গে, কম্পিউটার এবং খেলার সরঞ্জামও এর নিশানায় থাকবে।
নয়া মার্কিন ট্যারিফের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কানাডা এই পদক্ষেপ করেছে বলে জানান ডমিনিক। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুসারে, 'ডলারের বদলে ডলার' - নীতিতে চালু করা কানাডার এই নয়া শুল্ক নিউ ইয়র্ক টাইম জোনের নিরিখে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ, ২০২৫) ভোররাত (বুধবার মধ্যরাতের পর) ১২টা বেজে ০১ মিনিট থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ:
অন্যদিকে, চুপ করে বসে নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নও। ইতিমধ্য়েই একবার ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে তাদেরকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে এবং একজোট হতে দেখা গিয়েছে। আর, এবার তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে ট্যারিফ যুদ্ধেও সামিল হল।
বুধবার (১২ মার্চ, ২০২৫) ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পালটা শুল্ক নীতি ঘোষণা করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের বক্তব্য, ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রাম্পের সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই পদক্ষেপ করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধুমাত্র মার্কিন ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যের উপরেই শুল্ক চাপায়নি। সেইসঙ্গে, পোশাক (বিশেষ করে জিন্স), গৃহস্থালির সরঞ্জাম, কৃষিতে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী, মোটরসাইকেল, বারবন হুইস্কি, পিনাট বাটার-সহ অসংখ্য মার্কিন পণ্যকে নতুন ট্যারিফের আওতায় এনেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য, তারা এমনভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করতে চাইছে, যাতে ইউরোপীয় দেশগুলিকে যতটা সম্ভব কম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়, সেই ব্য়বস্থা পাকা করা।
ব্রিটেনের অবস্থান:
অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকলেও আমেরিকার সঙ্গে ট্যারিফ যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ধীরে চলো নীতি নিয়ে এগোচ্ছে ইউনাইটেড কিংডম।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার হাউস অফ কমন্সের প্রশ্নোত্তর পর্বে জানিয়েছেন, আপাতত তাঁদের সরকার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির মোকাবিলা করার সব রাস্তা খোলা রাখছে।
যদিও লিবারাল ডেমোক্র্যাট নেতা স্যার এড ড্যাভি মনে করেন, ব্রিটিশ সরকারের আরও সাহসি পদক্ষেপ করার উচিত। কারণ, আমেরিকার নয়া শুল্ক নীতি ব্রিটেনের বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বার্তা ট্রাম্পের:
এদিকে মার্কিন পণ্য়ের উপর পালটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুল্ক আরোপ করতেই বেজায় চটেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গোটা পরিস্থিতির জন্য ইউরোপকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি।
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীনই ট্রাম্প বলে বসেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে শোষিত হয়েছি। আর আমরা শোষণ সহ্য করব না।'