কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মঙ্গলবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে 'শান্তি' আনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন এবং মার্কিন নেতাকে একজন 'রূপান্তরকারী প্রেসিডেন্ট' হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্প প্রায় ৫০ বার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। এই আবহে ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় কার্নি বলেন, 'আপনি একজন রূপান্তরকারী প্রেসিডেন্ট। অর্থনীতির রূপান্তর, প্রতিরক্ষা খাতে ন্যাটোর অংশীদারদের অভূতপূর্ব দায়বদ্ধতা, ভারত ও পাকিস্তান থেকে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের শক্তি হিসেবে ইরানকে দুর্বল করে দেওয়া... সবই আপনার নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, মার্ক কার্নি কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে প্রবল ভাবে বিরোধিতা করেছিলেন ট্রাম্পের। মার্কিন শুল্কের জবাবে পালটা শুল্ক চাপিয়েছিলেন কার্নি। এদিকে কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম প্রদেশ করার কথা বারবার শোনা গিয়েছে ট্রাম্পের গলায়। এই আবহে মার্কিন-কানাডা সম্পর্কের বরফ গলাতে কার্নি এই ট্রাম্প বন্দনা করলেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
এদিকে ভারত-পাক সংঘাত থামানোর জন্য কার্নি ট্রাম্পের প্রশংসা করলেও ভারত প্রথম থেকে বলে এসেছে, এই সংঘাত থামানোর ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনও পক্ষের ভূমিকা ছিল না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারতের মার খেয়ে পাকিস্তান বাধ্য হয়ে সরাসরি সংঘর্ষবিরতির আবেদন জানিয়েছিল ভারতীয় সেনার কাছে। উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁতে জঙ্গি হানার পর ৬-৭ মে-র রাতে ভারত পাকিস্তানে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। আর তারপর পাকিস্তান ভারতে হামলার চেষ্টা করে। এর জবাবে ভারত ১০ মে ভোরে পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সেগুলিতে অকেজো করে দিয়েছিল। তারপরই পাকিস্তান বাধ্য হয়ে ভারতের কাছে সংঘর্ষবিরতির বার্তা দেয়। তবে ভারত সেই সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা করার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে পোস্ট করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে ক্রমেই ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি ছিল, তিনি যদি 'শুল্ক হাতিয়ার' ব্যবহার না করতেন, তাহলে ভারত-পাক সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হত। ট্রাম্প বলেছিলেন, 'আমি যুদ্ধ বন্ধে শুল্ক ব্যবহার করেছিলাম। আপনি যদি ভারত ও পাকিস্তানের দিকে তাকান, তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। সাতটি বিমান গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছিল। তারা পরমাণু শক্তিধর। আমি দুই দেশকে ঠিক কী বলেছিলাম, তা প্রকাশ করতে চাই না, কিন্তু আমি যা বলেছি তা খুবই কার্যকর ছিল। তারা এই সংঘর্ষ বন্ধ করে দিয়েছিল। এবং এই শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি ছিল বাণিজ্য।' এদিকে ট্রাম্প এই দাবি করলেও ভারত এখনও আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেনি। উলটে রাশিয়ার থেকে তেল কেনায় ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। এদিকে ভারতের বাজারে নিজেদের কৃষি পণ্য বিক্রির জন্য চাপও দিচ্ছে আমেরিকা। তবে সেই চাপের সামনে মাথা নত করেনি ভারত। সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ শুল্ক মাথায় চাপলেও ভারত স্বতন্ত্র ভাবে নিজের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে।