কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থী শিখদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালানোর জন্যে নাকি অনুমোদন দিয়েছিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সম্প্রতি এমনই দাবি করে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল 'দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট' সংবাদপত্রে। আর সেই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই কানাডার বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ডেভিড মরিসন স্বীকার করলেন যে খলিস্তানিদের ওপর হামলার সঙ্গে অমিত শাহের নাম জড়িয়ে তিনিই ওয়াশিংটন পোস্টকে এই সব কথা বলেছিলেন। এই নয়া ঘটনার জেরে ভারত-কানাডার সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। (আরও পড়়ুন: খলিস্তানি জঙ্গি হত্যার ছকের জেরে কি ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে USA?)
আরও পড়ুন: কথা রেখে LAC থেকে সরছে সেনা? নিশ্চিত হতে যৌথভাবে এই কাজ ভারত-চিনের...
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে দাবি করা হয়, কানাডার পুলিশের কাছে নাকি এমন প্রমাণ এসেছে, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে ভারতের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতার অনুমোদনেই খলিস্তানিদের ওপর হামলা হচ্ছে কানাডায়। সেই সময় সূত্রের বরাত দিয়ে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, সেই 'শীর্ষ স্থানীয় নেতা' হলেন অমিত শাহ। এবার ডেভিড স্বীকার করেন যে ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদিক তাঁকে ফোন করে এই নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন। সেই সময় কোনও প্রমাণ না দিলেও সাংবাদিককে জেভিড জানিয়েছিলেন যে সেই 'শীর্ষ স্থানীয় ভারতীয় নেতা' অমিত শাহ। উল্লেখ্য, সংসদীয় কমিটির সামনে বয়ান দেওয়ার সময় ডেভিড এই স্বীকারোক্তি দেন।
হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের ঘটনায় প্রথম থেকেই ভারতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আসছে কানাডা। তবে দিল্লিও দাবি করে এসেছে, এই মামলায় দিল্লির হাতে কোনও প্রমাণ তুলে দেয়নি জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। এরই মাঝে এই মামলার জেরে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই আবহে সম্প্রতি ট্রুডো আবার সেদেশের সংসদীয় কমিটির সামনে বয়ান দিয়ে জানিয়েছিলেন, খলিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনে ভরতীয় এজেন্টের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ দিল্লির হাতে তুলে দেয়নি তাঁর সরকার।
কে এই হরদীপ সিং নিজ্জর?
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ১৮ জুন গুরুদ্বারের ভেতরেই গুলি করে হত্যা করা হয় খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরকে। হরদীপকে ২০ বারেরও বেশি গুলি করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পঞ্জাবি অধ্যুষিত সারে অঞ্চলে থাকত হরদীপ। বিগত কয়েকবছরে কানাডার ভ্যানকুবারে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে খলিস্তানি বিক্ষোভের নেপথ্যে ছিল এই হরদীপ। কানাডায় মৃত হরদীপের বিরুদ্ধে এনআইএ-র চারটি মামলা ছিল। এক হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র সহ খলিস্তানি যোগের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এই আবহে হরদীপ নিজ্জরের মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল এনআইএ। জানা যায়, হরদীপ খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান ছিল। গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের 'শিখস ফর জাস্টিস' সংগঠনের মতাদর্শ প্রচারের দায়িত্ব ছিল হরদীপের টাইগার ফোর্সের ওপর।
ভারত-কানাডা কুটনৈতিক দ্বন্দ্ব
এদিকে সম্প্রতি কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সঞ্জয় বর্মা-সহ কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিবিদকে একটি মামলার তদন্তে ‘পারসন অফ ইন্টারেস্ট’ করা হয়। এমনকী তাঁদের জেরা করতে চাওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়েছে একাধিক রিপোর্টে। সূত্রের খবর, খলিস্তানি জঙ্গি নিজ্জরের মামলায় সঞ্জয় ভার্মাদের কাছে কোনও তথ্য থাকতে পারে বলে দাবি করেছিল কানাডা। আর এরপরই কানাডা সরকারের সেই পদক্ষেপে তুমুল ক্ষোভপ্রকাশ করে নয়াদিল্লি। প্রাথমিকভাবে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। তলব করা হয় ভারতে কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট রস উইলারকে। এরপর কানাডা থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার-সহ বেশ কয়েকজন কূটনীতিবিদকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা করা হয়। আর তারপর ভারতে কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার-সহ ছয় কূটনীতিবিদকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।