ভারতে প্রথমবারের মতো সরকারি সফরে পা রাখলেন কানাডার বিদেশমন্ত্রী অনিতা আনন্দ। দু'দিনের এই সরকারি সফরে রবিবার নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন তিনি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, আনন্দের এই দিল্লি সফর ভারত-কানাডা সম্পর্কের ইতিবাচক গতি বাড়াতে সহায়তা করবে। ভারতে পা রাখা অনিতা আনন্দের একটি ছবি শেয়ার করে জয়সওয়াল এক্স পোস্টে লিখেছেন, 'তাঁর প্রথম সরকারি সফরে নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন কানাডার বিদেশমন্ত্রী অনিতা আনন্দ। তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। এই সফর ভারত-কানাডা সম্পর্কের ইতিবাচক গতি আনতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় হবে এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হবে।'
সফরকালে আনন্দ সোমবার দিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বাণিজ্য বৈচিত্র্য, জ্বালানি রূপান্তর এবং সুরক্ষার মতো ইস্যুতে কৌশলগত সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে জয়শঙ্কর এবং আনন্দের মধ্যে। দিল্লি থেকে এরপর মুম্বই যাবেন অনিতা আনন্দ। কানাডায় ভারতের বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বিষয়ে আলোচনা করতেই সেখানে যাবেন অনিতা।
উল্লেখ্য, ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কে যে ফাটল ছিল, তা ধীরে ধীরে মিটতে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যকার 'উত্তেজনার' পর এটাই কোনও বিদেশমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হতে চলেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে। আর এবার কানাডার বিদেশমন্ত্রী অনিতা আনন্দ ভারত সফরে এলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নির বৈঠকের পর গত অগস্ট মাসে অটোয়া ও দিল্লিকে একে অপরের দেশে হাইকমিশনার নিয়োগ করে। একদিকে কানাডা থেকে দিল্লিতে নিয়োগ করা হয়েছে ক্রিস্টোফার কুপারকে। একইসঙ্গে দীনেশ পট্টনায়েককে কানাডায় পাঠিয়েছে ভারত। অনিতা আনন্দ সে সময় বলেছিলেন, 'নতুন হাইকমিশনারের নিয়োগের ফলে ভারতের সাথে কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।'
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্ক কার্নি গত ১৭ জুন কানাডার কানাসানস্কিসে জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে একটি বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে দুজনেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। এরই মাঝে কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা উপদেষ্টা নাটালি ড্রুইন এবং বিদেশ প্রতিমন্ত্রী সচিব ডেভিড মরিসন সেপ্টেম্বরে ভারত সফর করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে 'ভারতীয় এজেন্টের' জড়িত থাকার অভিযোগ করেছিলেন কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। যার পরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সর্বকালের সর্বনিম্নে পর্যায়ে পৌঁছেছিল। গত বছরের অক্টোবরে অটোয়ায় নিজ্জর মামলার জেরে কানাডায় অবস্থিত হাইকমিশ থেকে হাইমিশনার এবং আরও পাঁচ কূটনীতিককে ভারত ফিরিয়ে এনেছিল। ভারতও কানাডিয়ান কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছিল। তবে মার্ক কার্নি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ফের বরফ গলতে শুরু করেছে দুই দেশের সম্পর্কে। এই আবহে অনিতা আনন্দের ভারত সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।