কানাডার সংবাদমাধ্যমের একাংশ ভারতের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিল, তা সেদেশের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও রাজনীতিকদের পক্ষ থেকেই খারিজ করে দেওয়া হল।
সম্প্রতি কানাডার একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০২২ সালে সেখানকার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে নাকি হস্তক্ষেপ করেছিল নয়া দিল্লি! যদিও সেই নির্বাচনীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিরাই একবাক্যে এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।
কানাডার সরকার দ্বারা পোষিত সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজ-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত তারা জানতে পেরেছে (যদিও সেই সূত্রের নাম বা পরিচয় প্রকাশ্যে আনা হয়নি), ২০২২ সালে প্যাট্রিক ব্রাউনের প্রার্থীপদই নাকি বাতিল করার চেষ্টা করেছিলেন ভারতীয় এজেন্টরা। প্রসঙ্গত, বর্তমানে এই প্যাট্রিক ব্রাউন ব্র্যাম্পটনের গ্রেটার টরন্টো এরিয়ার মেয়র।
ওই সংবাদমাধ্যমের তরফে আরও দাবি করা হয়েছিল, ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধিরা নাকি ব্রাউনের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে থাকা অন্যতম ব্যক্তি, সহ-সভানেত্রী মিশেল ব়্যাম্পেল গার্নারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। যার জেরেই সেই বছরের জুন মাসে তিনি প্রচার থেকে সরে দাঁড়ান!
তথ্য বলছে, সেই নির্দিষ্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডেই খুব সহজে জয়লাভ করেছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির বর্তমান নেতা পিয়েরে পলিয়েভেরে। তিনি প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। বস্তুত, ওই পদে ব্রাউনকে কখনই কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হিসাবে বিবেচনাই করা হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের বিরুদ্ধে সরকারি সংবাদমাধ্যমের এই সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ একবাক্যে খারিজ করে দিয়েছেন গার্নার স্বয়ং। তিনি লিখিতভাবে ওই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'আমি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় মিস্টার ব্রাউনের প্রচার কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।...'
'...আমার উপর কখনও, কোনও তরফ থেকে, কোনও ধরনের চাপ দেওয়া হয়নি। আমি একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান। একজন দক্ষ কমিউনিকেটর। এবং মন্ত্রিসভার একজন প্রাক্তন সদস্য। আমি যে যেকোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দায়িত্ব পালন করতে পারি, সেটা আমি জানি। এবং আমি সেটা সম্পূর্ণভাবে নিজের শর্তেই করব। আমি বোকা নই।'
অন্যদিকে, এই একই ইস্যুতে সরব হয়েছেন প্যাট্রিক ব্রাউনও। সোমবার তিনি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতে লেখেন, 'আমি মনে করি না, ২০২২ সালে কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনে যে চূড়ান্ত ফলাফল হয়েছিল, সেক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল।'
বিষয়টি নিয়ে কানাডার পার্লামেন্টের হাউস অফ কমন্স-এও আলোচনা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে ব্রাউন তাঁর লিখিত জবাবে আরও জানিয়েছেন, '...কমিটির শুনানিতে জমা করার মতো কোনও নতুন তথ্য প্রমাণ আমার কাছে নেই। আমার মনে হয়, আমাকে নিয়ে যে কথা বলা হচ্ছে, তার পিছনে যত না কোনও গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি রয়েছে রাজনীতি। আমি এতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।'
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির মুখপাত্রের গলাতেও। তিনি জানিয়েছেন, কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস বা সিএসআইএস-এর তরফে এমন কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়নি, যাতে মনে হতে পারে, সংশ্লিষ্ট দলীয় নেতা নির্বাচনে কোনও বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ রয়েছে।