দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর মিছিলের সময় যে হিংসা হয়েছে, তার জেরে কার্যত ছন্দ হারিয়েছে ৬২ দিনের আন্দোলন। ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ, লুকআউট নোটিস পাঠানো হয়েছে শীর্ষ কৃষক নেতাদের। বৃহস্পতিবারও আন্দোলন গুটিয়ে নিয়েছে বেশ কিছু কৃষক নেতা। এখন সবার নজর অন্যতম প্রধান সংগঠক রাকেশ তিকাইতের ওপর যিনি বলেছেন যে তিনি আত্মহত্যা করবেন, তাও চাষী আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না। কিন্তু যেভাবে অবস্থান শক্ত করছে পুলিশ প্রশাসন, আর কদিন কৃষক আন্দোলন চলবে সেই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
এদিন UAPA ও দেশদ্রোহীতার ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। সেদিন যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তার নেপথ্যে কে সেটা তদন্ত করবে বিশেষ সেল। অন্যদিকে কৃষকদের বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে এলাকা খালি করতে বলেছে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ পুলিশ।ভারতীয় কিষান সংগঠনের সদস্যরা এই গাজিপুরেই বসে আছেন ২৮ নভেম্বর থেকে। সেখানে এদিন সন্ধ্যা থেকেই ক্রমশ বেড়েছে পুলিশ। চাপ বেড়েছে রাকেশ তিকাইতের ওপর উঠে যাওয়ার জন্য। ইতিমধ্যেই তাঁকে পুলিশ তদন্তের জন্য ডাক পাঠিয়েছে। তিকাইত অবশ্য বলছেন যে তিনি আত্মহত্যা করবেন, তবুও আইন প্রত্যাহার না হওয়া অবধি প্রতিবাদ শেষ করবেন না। তাঁর প্রাণ সংশয় আছে বলেও দাবি করেন তিকাইত। এদিন একজনকে চড় মারছেন তিনি, সেই ফুটেজও ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলেন যে গাজিপুরে কোনও অশান্তি হয়নি তবুও দমননীতি নিচ্ছে উত্তর প্রদেশ সরকার।
অন্যদিকে দিল্লি পুলিশ বলেছে যে দিল্লিতে যে তাণ্ডবলীলা হয়েছে তাতে দেশে ও বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিদের কী ভূমিকা, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশের দাবি যে কৃষকদের সঙ্গে যে বোঝাপড়া হয়েছিল, সেটা আগে থেকেই ভঙ্গ করার পরিকল্পনা ছিল। সব মিলিয়ে লাল কেল্লা সহ নয় জায়গায় হওয়া হিংসার তদন্ত করবে অপরাধদমন শাখা। এসিপি পদাধিকারী অফিসার প্রতিটি কেসের দায়িত্ব থাকবে। ইতিমধ্যেই ৩৩টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ৪৪ জনের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করা হয়েছে। মোট ৩৭ কৃষক নেতাদের তিনদিনের মধ্যে উত্তর দিতে হবে কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
এদিন সিঙ্ঘু সীমান্তে সদ্ভাবনা মিছিল সংগঠিত করে চাষীরা। তবে যারা হিংসায় রত হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারায় মামলা দায়ের করল পুলিশ। জানা গিয়েছে লাল কেল্লায় পুলিশের থেকে বন্দুকের গুলি ছিনিয়ে নেয় দাঙ্গাবাজরা। পিস্তলও নেওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা তবে সফল হয়নি বলে পুলিশের দাবি।
এদিন নয়ডায় যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছিল, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হস্তক্ষেপের পর সেটি উঠে যায়। অন্যদিকে সিঙ্ঘু ও তিকরিতে এখন কার্যত ভাঙা হাট। আগের থেকে অনেক কম সংখ্যক কৃষক এখন সেখানে উপস্থিত। বেড়েছে পুলিশের প্রহরা, আগের থেকে সহজেই অবরোধ করা রাস্তাগুলিতে চলা যাচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, দিল্লিতে হিংসার পর খুব বেশিদিন আর কৃষি আন্দোলন টানতে পারবেন না চাষীরা। তবে তিকাইত সহ বেশ কিছু নেতা এখনও অনড়। শেষ পর্যন্ত কী হয়, এখন সেদিকেই থাকছে নজর।