বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ আবহের মধ্যেই বড় পরিকল্পনা নরেন্দ্র মোদী সরকারের। এবার থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও দেশের মিসাইল, শেল, বোমা ও গোলাবারুদ তৈরির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যাতে ভারত অস্ত্রের ঘাটতিতে না পড়ে, সেই যুক্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটি ভারতের স্বনির্ভরতা বা আত্মনির্ভরতার প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
সূত্রের খবর, রাজস্ব ক্রয় ম্যানুয়াল বা আরপিএম-এ সংশোধন এনে এবার কেন্দ্র জানিয়েছে, বোমা বা গোলাবারুদ তৈরিতে আগ্রহী কোনও বেসরকারি সংস্থাকে আর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা মিউনিশনস ইন্ডিয়া লিমিটেডের কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিতে হবে না। অর্থাৎ, বেসরকারি শিল্পপতিরা এখন থেকে ১০৫ মিমি, ১৩০ মিমি, ১৫০ মিমি কামানের গোলা, পিনাকা মিসাইল, এক হাজার পাউন্ডের বোমা, মর্টার শেল, হ্যান্ড গ্রেনেড ও ছোট-বড় ক্যালিবারের গুলি, সবই তৈরি করতে পারবেন। এছাড়াও, এইচটি জানতে পেরেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ডিআরডিও-কে চিঠি লিখে জানিয়েছে যে তারা মিসাইল উন্নয়ন ও একীভূতকরণের কাজ বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (বিডিএল)-এর মতো সংস্থাগুলি কেবল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, 'অপারেশন সিঁদুর' দেখিয়েছে যে ভবিষ্যৎ স্ট্যান্ড-অফ অস্ত্র এবং দীর্ঘ পাল্লার প্রচলিত মিসাইলের উপর নির্ভরশীল। তাই ক্ষেপণাস্ত্র খাতটি বেসরকারি সংস্থার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ডিআরডিও-র অধীনে বিডিএল এবং ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল) আকাশ, অ্যাস্ট্রা, মিলানের মতো মিসাইল এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং টর্পেডোর একমাত্র নির্মাতা।
গত ১০ মে অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভারতীয় বায়ুসেনা ধ্বংস করেছে। যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ এবং জেএফ-১৭ শ্রেণির বিমানও রয়েছে।আর এর নেপথ্যে রয়েছে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ৩১৪ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানা সম্ভব হয়েছিল দূরপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমের মাধ্যমে। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যাতে গোলাবারুদ শেষ না হয় এবং বিদেশি বিক্রেতাদের কাছ থেকে কম সময়ে উচ্চমূল্যে সেগুলো কিনতে বাধ্য না হওয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মিসাইল এবং শেল উভয় খাতই বেসরকারি সংস্থার জন্য খুলে দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ও পশ্চিমী বিশ্ব এবং গাজা যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও ইজরায়েল জড়িত থাকায়, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবারুদের চাহিদা বেশি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য স্থায়ী সরবরাহকারী হল চিন।
তবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যত প্রতিরক্ষা খাতে দেশের নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করে দেবে, এমনটাই মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের অভিযোগ, দেশের নিরাপত্তাকে খোলা বাজারে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের হাতে দেশের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি রেলও চলে গেছে, তাঁদের হাতেই এবার বন্দুক ও কামানের কারখানাও তুলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার।