গত বছর ভয়ঙ্কর ভূমিধসের কবলে পড়েছিল কেরলের ওয়েনাড়। তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। নিহত হয়েছিলেন বহু মানুষ। সেই ধ্বংসলীলার পরে এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি করে আসছিল কেরল সরকার। তবে আর্থিক সাহায্যের পরিবর্তে শুক্রবার কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে মূলধন বিনিয়োগের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় ওয়েনাড়ে পুনর্বাসনের জন্য কেরল সরকারকে সুদমুক্ত ঋণের অনুমোদন দিল। ৫২৯.৫ কোটি টাকার সুদমুক্ত ঋণ মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার যে পরিমাণ অর্থ দাবি করে আসছিল, এই অনুমোদন তার থেকেও অনেক কম। এই অবস্থায় কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: খুব বিপদ! কেরলে ধসের খবর প্রথম দিয়েছিলেন যে মহিলা তাঁর কী হল?
জানা যাচ্ছে, কেরল সরকার পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রের কাছে ২২৬২ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা করেছিল। তবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের চিঠিতে এই প্রকল্পের অধীনে ৫২৯.৫ কোটি বরাদ্দ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে যে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মুন্ডাকাই এবং চুরলমালায় পুনর্বাসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য ১৬টি প্রকল্পের জন্য টাকা দেওয়া হোক। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে থাকছে জীবিতদের পুনর্বাসনের জন্য রাস্তা নির্মাণ, অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার স্টেশন পুনর্নির্মাণ, চুরলমালা সেতু নির্মাণ, ভেল্লারমালা এবং মুন্ডাকাইতে স্কুল পুনর্নির্মাণ, কারাপুঝায় একটি জল শোধনাগার এবং এলস্টোন টাউনশিপে একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, চিঠিতে বলা হয়েছে যে এই প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ করা অর্থ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। কোনওভাবে টাকা রেখে দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে ব্যয় হিসাবে গণ্য করা হবে না। এ বিষয়ে কেরলের অর্থমন্ত্রী কেএন বালাগোপাল কেন্দ্রের নির্দেশের সমালোচনা করে বলেছেন, মাত্র দেড় মাসের মধ্যে তহবিল ব্যবহার করার শর্ত বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি বলেন, ‘মুন্ডাকাই-চুড়লমালায় ভূমিধসের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা কেন্দ্রের কাছে ২২০০ কোটি অনুদানের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। সাধারণত এই ধরনের পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলিকে অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু, অনুদান দেওয়া হয়নি। পুনর্বাসন কাজের জন্য আমরা ঋণও চেয়েছিলাম। কারণ আমাদের দ্রুত কাজ শুরু করার প্রয়োজন। এখন কেন্দ্র ৫২৯.৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছে। তবে শর্ত রয়েছে যে তহবিলগুলি দ্রুত ব্যবহার করতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, এত অল্প সময়ের মধ্যে এই তহবিলের অর্থ খরচ করা অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। অর্থ দফতরের কর্মকর্তারা এর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন বলে বালগোপাল জানান। তবে দ্রুত পুনর্বাসনের প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী।
এদিকে, বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীশন ওয়েনাড়ের জন্য আর্থিক প্যাকেজের পরিবর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে ‘রাজ্যের জনগণের সঙ্গে উপহাস’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া দেড় মাসের মধ্যে কেন্দ্রের বরাদ্দ করা ঋণ ব্যবহার করার নির্দেশকে অবাস্তব বলে কটাক্ষ করেছেন। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্র কেরলকে সাহায্য করার ভান করে তাদের শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছে। সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগগ্রস্ত হওয়া অন্যান্য রাজ্যগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। অথচ কেরলকে সেই সহায়তা থেকে বঞ্চিত করছে। রাজ্যের জন্য আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কেন্দ্রের রয়েছে।