একশো দিনের কাজের টাকা, গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা, আবাস যোজনার টাকা, স্বাস্থ্য মিশনের টাকা–সহ নানা প্রকল্পের টাকা বাংলা পায়নি। কেন্দ্রীয় সরকার তা আটকে রেখেছে বলে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের অভিযোগ। সেই টাকা রাজ্য সরকার নিজের কোষাগার থেকে দিয়েছে। সেখানে এবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন একটি পথ বেছে নিতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। ‘এক দেশ, এক ভোট’, ‘এক দেশ, এক রেশন’ এসব যখন করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার তখন কেন্দ্রীয় প্রকল্পেও এক অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে কেন্দ্র বলে সূত্রের খবর। আর এটা করলে কেন্দ্রের অর্থ সাহায্যে চলা প্রকল্পের টাকা আর সরাসরি রাজ্যের হাতে দেবে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বরং টাকা সরাসরি জমা পড়বে উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অথবা সংশ্লিষ্ট দফতরের অ্যাকাউন্টে। এখন এটা নিয়েই শুরু হয়েছে কেন্দ্র–রাজ্য বিতর্ক। যা সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি করছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অভিযোগ, একে তো বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলার বরাদ্দ কেন্দ্র আটকে রেখেছে। তার উপর নতুন করে এক অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থা চালু করলে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূলে আঘাত লাগবে। এই ব্যবস্থা চালু হলে কোনও প্রকল্পের টাকাতেই রাজ্যের আর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এমনকী কোনও প্রকল্পে রাজ্য সরকারের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও খরচে সরাসরি নজরদারি করবে কেন্দ্র। এই খবরদারি পছন্দ নয় নবান্নের। তাই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র আটকে রাখার জেরে রাজ্য নিজেদের অর্থেই প্রকল্পগুলি চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বালি সেতুর মেরামতির কাজ কবে শেষ হতে পারে? যাত্রীদের হয়রানি চরমে উঠেছে
এই নতুন নিয়ম চালু হলে কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে। ২০২৬ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন আছে। তাই ভোট প্রাপ্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনা এবং একশো দিনের প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য অর্থ ছাড়তে পারে। তাই এখন এই নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে তারা। এতদিন কেন্দ্রীয় সরকার নিজের বরাদ্দ কয়েকটি ধাপে রাজ্য সরকারকে দিত। রাজ্য সেই টাকা খরচ করে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পাঠালে পরের কিস্তি মিলত। এই ব্যবস্থা চালু হলে রাজ্যকে আর সেসব করতে হবে না। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। সেখান থেকেই যাবে উপভোক্তাদের কাছে। তাহলে নাম হবে কেন্দ্র দিচ্ছে বলে।
কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। যে সব প্রকল্পে রাজ্যের অংশ দেওয়ার ব্যাপার আছে সেগুলি থেকে রাজ্য সরকার সরে এলে কী হবে? প্রকল্প পিছু অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কেন্দ্র–রাজ্যের টাকা সেখানে জমা পড়ার পর খরচ হবে সেখান থেকে। এমনই ঠিক করছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের হাতে যখন থাকবে না তখন রাজ্য টাকা বরাদ্দ নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার নিজস্ব প্রকল্প করে টাকা দিতে পারে বাংলার মানুষজনকে। তাতে একটু হলেও চাপে পড়বে কেন্দ্র। এই বিষয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘আমরা ইউসি দিলে তবে তো টাকা দেয় ওরা। আমাদের প্রাপ্য টাকাই তো কেন্দ্র দিচ্ছে না। সেগুলি তো বিয়ন্ড টাইম হয়ে গিয়েছে। এখন রাজনৈতিক গিমিক করছে।’ আর বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা তৃণমূলের একটা রাজনৈতিক স্লোগান ছাড়া কিছু নয়।’