মোবাইল অ্যাপের এই বাড়বাড়ন্তের যুগে যথেচ্ছভাবে গজিয়ে উঠছে একের পর এক লোন অ্যাপ। এছাড়াও, অসংখ্য মাইক্রো ফিন্যান্স সংস্থা রয়েছে, যারা অত্যন্ত চড়া সুদের বিনিময়ে ঋণের ব্যবসা করছে।
সূত্রের দাবি, এদের মধ্য়ে এমন অনেক অ্যাপ ও আর্থিক সংস্থা রয়েছে, যারা নিয়ম মেনে ঋণ দানের ব্যবসা করছে না। বিষয়টা নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকার এই ঋণ প্রদানকারীদের উপর এবার নজরদারি শুরু করতে চলেছে বলে দাবি সূত্রের। যাতে বেআইনি ঋণ প্রদানকারীদের কারবার বন্ধ করা যায়। একই উদ্দেশ্যে একাধিক ঋণ প্রদানকারী অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হতে পারে। এমনকী, ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং সর্বাধিক ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাসও করতে হতে পারে দোষী ব্যক্তিদের। বিজনেস স্টান্ডার্ড-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই সমস্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, এই সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে নতুন একটি বিল সংসদে পেশ করে তা আইনে পরিবর্তিত করা যেতে পারে।
তথ্য বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর ডিজিট্যাল ঋণ প্রদান সংক্রান্ত কার্যনির্বাহী গোষ্ঠী যে রিপোর্ট পেশ করেছিল, সেই রিপোর্টেই প্রথমবার এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
নতুন আইন প্রণয়ন করা হলে তাতে কী কী থাকবে?
এই মর্মে যে খসড়া বিল প্রস্তত করা হয়েছে, তার শিরোনাম - 'ব্য়ানিং অফ আনরেগুলেটেড লেন্ডিং অ্য়াক্টিভিটিস' (বিইউএলএ)। যার প্রধান উদ্দেশ্য হল, যে সমস্ত ব্যক্তি বা সংস্থা, যাঁরা এবং যেগুলি আরবিআই বা সংশ্লিষ্ট কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা স্বীকৃত নয়, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সেইসব ব্যক্তি ও সংস্থাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
এই বিলে প্রধান যে বিষয়গুলি থাকছে, সেগুলি হল:
বিভিন্ন ডিজিট্যাল ঋণ প্রদানকারী প্ল্যাটফর্মগুলি এই বিলের আওতাধীন থাকবে। যাদের সরকারি স্বীকৃতি নেই, তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং তারা আর তাদের ব্যবসা চালাতে পারবে না।
এরপরও যদি আইন ভেঙে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে দোষীর ৭ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। অথবা, দোষীকে ২ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। অথবা, দু'টিই হতে পারে।
এছাড়াও, যদি ঋণদাতারা টাকা আদায় করার জন্য কোনও ধরনের জবরদস্তি করে থাকে, তাহলে তাহলে তাদের ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হাজতবাস করতে হতে পারে।
শুধু তাই নয়। যদি দেখা যায়, কোনও বেআইনি ঋণ প্রদানকারী সংস্থা একসঙ্গে একাধিক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ঋণের কারবার ফেঁদে বসেছে, এবং তার ফলে একটা বিরাট জনসংখ্যা আক্রান্ত হয়েছে, তাহলে সেই মামলার তদন্তভার সরাসরি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
কোন প্রেক্ষাপটে এমন পদক্ষেপ?
প্রসঙ্গত, ইদানীংকালে বিভিন্ন মোবাইল অ্য়াপের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া ও ঋণ নেওয়ার প্রবণতা মারাত্মক হারে বেড়ে গিয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এই অ্য়াপগুলির কোনও আইনি বৈধতা নেই।
উপরন্তু, এই অ্যাপগুলি অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ দিচ্ছে। যা শোধ করতে গিয়ে কার্যত খাবি খেতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তাঁদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করতে অনেক সময় ঋণ প্রদানকারী অ্যাপ সংস্থার পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানোর মতো ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বহু 'হিডেন ফিজ' থাকছে। যার ফলে কিস্তির পরিমাণ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ধার শোধ করতে না পেরে গ্রাহকদের আত্মহত্যা করার মতো মর্মান্তিক ঘটনার খবরও এসেছে।
গুগলের পদক্ষেপ:
বিষয়টি নজরে আসার পর গুগলের তরফে বিশেষ একটি পদক্ষেপ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৩ সালের অগস্ট মাসের মধ্যে গুগল তাদের প্লে স্টোর থেকে প্রায় ২,২০০টি এমন অ্যাপ সরিয়ে দেয়।
সরকারের নির্দেশ:
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং সোশল মিডিয়া কোম্পানিগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা তাদের ডোমেনে এই ধরনের কোনও বেআইনি ঋণ প্রদানকারী অ্য়াপ বা সংস্থার বিজ্ঞাপন না দেয়।
সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকেই এই বিল সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। সরকারের তরফে তাদের বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা যাতে এই খসড়া বিল নিয়ে নিজেদের মতামত পেশ করে।