দুই বছর আগে নয়া কর নীতি চালু করেছিল মোদী সরকার। বাজেটে সেই ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পাশাপাশি পুরনো করনীতিও চলবে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু দুই বছরে তেমন সাড়া ফেলেনি নয়া করনীতি। তার কারণ হল পুরনোতে অনেক বেশি করছাড় পাওয়া যায়। এই কারণে এবার নয়া কর নীতিকে ঢেলে সাজানোর কথা ভাবছে সরকার। তেমনই জানা গিয়েছে সরকারের সূত্রে। একই সঙ্গে পুরনো করনীতি ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনাও চলছে। বর্তমানে অনেক করছাড় ও বিশেষ সুযোগ পাওয়া যায় পুরনো করনীতিতে। কিন্তু এর ফলে নানান জটিলতা দেখা যায় ও অনেক সময়ই কর সংক্রান্ত বিবাদ কোর্ট-কাছারিতে যায়। সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র কমাতে চাইছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমসের বাণিজ্য সংক্রান্ত সংবাদপত্র মিন্ট। প্রসঙ্গত, নয়া কর নীতিতে করের হার কিছুটা কম কিন্তু কোনও ছাড়ের ব্যবস্থা নেই। সেই কারণেই তেমন সাড়া ফেলেনি সেটা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্তা বলেছেন যে আরো কম করের হার রাখতে হবে নয়া পদ্ধতিতে। নাহলে পুরনো ট্যাক্সের পদ্ধতিতে যে সব ছাড় দেওয়া হচ্ছে সেটার সঙ্গে তুলনায় নয়া নীতি ফিকে থেকেই যাবে। বর্তমানে পুরনো নীতিতে হাউস রেন্ট, ইনস্যুরেন্স সহ বিভিন্ন ছাড়ের সুযোগ আছে। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে ন্যূনতম স্ল্যাবের সুযোগ পান, সেই প্রস্তাব এসেছে। তাহলে আয় অনেকটা বাড়লেই পরের স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হবে। তবে সরকার যে দুটি করনীতি চালাতে চায় না, সেই নিয়ে নিশ্চিত এই বরিষ্ঠ কর্তা।
এর আগে কর্পোরেশন ট্যাক্সের পদ্ধতি ঢেলে সাজিয়েছে কেন্দ্র। এবার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও সেই পদ্ধতি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ধাপে ধাপে কীভাবে আয়করে ছাড় উঠিয়ে দিয়ে দুই করনীতিতে একটিতে নিয়ে আসা যায়, সেই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই নিয়ে অর্থমন্ত্রক ও প্রত্যক্ষ কর বিভাগের মুখপাত্ররা কথা বলতে চাননি।
বরত্মানে নতুন কর নীতি অনুযায়ী ছটি স্ল্যাব আছে। সেগুলি হল ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫ ও ৩০ শতাংশ, তবে কোনও ছাড়ের ব্যবস্থা নেই। পুরনো নিয়মে দেড় লাখ অবধি কর ছাড়ের পাশাপাশি ৫, ২০ ও ৩০ শতাংশ হারে কর দেওয়ার নিয়ম আছে। ট্যাক্স বিশেষজ্ঞদের মতে যেই নিয়মই করা হোক, সেটা সহজ, সরল করতে হবে, যাতে যারা নিজেরা রিটার্ন জমা দিতে চান, তারাও সক্ষম হন।
হালে রাজস্ব সচিব তরুণ বাজাজ বলেন যে নয়া কর নীতি কখনোই মানুষ গ্রহণ করবেন না যদি সরকার করছাড় দিতেই থাকে। কীভাবে দুই করনীতির মধ্যে সামঞ্জস্য আনা যায়, সেটা সরকারের ভেবে দেখা উচিত বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে করনীতি সরল করার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি তুলে ধরেন। বর্তমানে নয়া করনীতিতে আড়াই লাখ অবধি আয়ে কোনও কর লাগে না। এরপর আড়াই থেকে পাঁচ লক্ষে ৫ শতাংশ, ৫-৭.৫ লাখে ১০ শতাংশ ও সাড়ে সাত থেকে ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
এই তো গেল অর্থনীতির কথা। কিন্তু এরপরেও আছে ভোটজয়ের টার্গেট। দুই বছর বাদে সাধারণ নির্বাচন। করছাড় উঠিয়ে দিলে যে সেটা মধ্যবিত্তরা খুব একটা ভালো ভাবে মেনে নেবে না, সেটা বলা বাহুল্য। তাই অর্থমন্ত্রক চাইলেও বাস্তবে ইনকাম ট্যাক্সের মতো একটি সংবেদনশীল বিষয়ে সরকার কতটা সাহস দেখাবে ভোটের আগে, সেই নিয়ে সন্দিহান অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।