রবি কৃষ্ণন খাজুরিয়া
সোমবার রাজৌরির একটি গ্রামে 'রহস্যজনক অসুস্থতায়' আরও দু'জনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের।
রবিবার আট বছরের এক বালক ও ৬২ বছরের এক বৃদ্ধ 'রহস্যজনক অসুস্থতায়' মারা যান।
বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, যারা মারা গিয়েছেন তাদের শরীরের প্লাজমা নমুনায় কিছু নিউরোটক্সিন পাওয়া গিয়েছে। তবে এনিয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন।
এদিকে অন্তত ১৩জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্য়ে ১১জন শিশু।ইতিমধ্য়েই মুখ্য়সচিব অটল ডালু পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সকলে যাতে সমণ্বয় রেখে কাজ করেন সেব্যাপারে বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতও শুনেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতামত, কোনও ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশন পাওয়া যায়নি। স্থানীয়স্তরে কিছু হতে পারে।
প্রসঙ্গত, আগের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল, রাজৌরি জেলার গ্রাম থেকে ছয় ভাইবোনকে শনিবার সন্ধ্যায় কোটরঙ্কার কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাদের মধ্যে দু'জন - ৫ বছর বয়সি মেয়ে এবং ১৪ বছর বয়সি ছেলে রবিবার মারা যায় এবং তাদের মধ্যে একজন সোমবার সকালে এসএমজিএস হাসপাতালে চিকিৎসার সময় অসুস্থতার কারণে মারা যায়।
নিহত ৬২ বছর বয়সি মহম্মদ ইউসুফও তিনটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের আত্মীয় এবং সোমবার সন্ধ্যায় একই ধরনের উপসর্গের কারণে মারা যান।
১৬, ১২ ও ১০ বছর বয়সি বাকি তিন ভাইবোন এখনও চিকিৎসাধীন।
'ছয় শিশুর বাবা শনিবার সন্ধ্যায় জ্বর, বমি এবং এপিসোডিক চেতনা ইত্যাদির লক্ষণ নিয়ে তাদের কোটরঙ্কার কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তাদের জম্মুর এসএমজিএস হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে ছয় শিশুর মধ্যে দুটি রবিবার এবং সোমবার তৃতীয় শিশুর মৃত্যু হয়।
পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ নয়াদিল্লি, পিজিআই, চণ্ডীগড়, দিল্লির ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-এর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গত বছরের ডিসেম্বরে বাধাল গ্রামে গিয়েছিলেন এবং মানুষ, জল এবং পরিবেশের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।
তিনি বলেন, 'নমুনা দেশের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। তাদের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এখনও অপেক্ষমান। তবে আমরা আমাদের গবেষণায় জানতে পেরেছি, ভাইরাল ইনফেকশনে মৃত্যু হচ্ছে না। রোগটি সংক্রামকও নয়।
রবিবার ও সোমবার দু'দিনের ব্যবধানে আরও চারজনের মৃত্যু জোরালোভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কোনও ধরনের বিষক্রিয়া মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, তিনটি পরিবারে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যেগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং একই গ্রামের।
তিনি বলেন, 'সংক্রমণ বা খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে গোটা গ্রাম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। এটি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয়।
ওই আধিকারিক আরও বলেন, "যতক্ষণ না আমরা জম্মু ও কাশ্মীর এফএসএল থেকে ভিসেরা রিপোর্ট এবং ডিআরডিও ল্যাবের টক্সিকোলজি সম্পর্কিত কিছু পরীক্ষার ফলাফল না পাই, ততক্ষণ আমাদের পক্ষে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে কিছু বলা অকালবোধন হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাকিনা মাসুদ ইতু বলেছিলেন, 'ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইচ১এন১ এবং এইচএমপিভি সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় কোনও ভাইরাল সংক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে দুটি পরিবারের মধ্যে প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এখন, এক মাসেরও বেশি সময়ের ব্যবধানের পরে, গত দুই দিনে অন্য একটি পরিবারে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, যা দুটি পরিবারের সাথে সম্পর্কিত, সুতরাং, এমন পরিবার রয়েছে, যা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
তিনি বলেছিলেন, 'কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে এবং আরও কিছু তদন্ত করা হচ্ছে কারণ মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞরা আরও তদন্ত চালাচ্ছেন।
গত ৭ ও ১২ ডিসেম্বর বাধাল গ্রামের একই পরিবারের অন্তত আটজন সদস্য রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে মারা যান।