জগন মোহন রেড্ডির জমানায় নাকি সরকারি আধিকরিকদের ঘুষ দিয়ে সৌরশক্তি সংক্রান্ত চুক্তি নিশ্চিত করেছিল আদানি গ্রিন। মার্কিন মুলুকে এই অভিযোগেই মামলা হয়েছে আদানির বিরুদ্ধে। তবে সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অন্ধ্রের সরকার এখনই কোনও পদক্ষেপ করবে না বলে জানিয়ে দিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তাঁর সাফ কথা, গত সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তি একতরফা ভাবে বাতিল করে দিতে পারে না তাঁর প্রশাসন। তিনি বলেন, 'যতক্ষণ না দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও পোক্ত প্রমাণ সামনে আসছে, ততক্ষণ রাজ্য সরকার চুক্তি বাতিল করে দিতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে চুক্তি বাতিল করতে হলে আমাদের মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। কোনও প্রমাণ না থাকলে আমরা কোনও পদক্ষেপ করতে পারি না।' এদিকে তিনি আরও বলেন, 'জগন মোহন রেড্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানোর সুবর্ণ সুযোগ আমেরিকার এই অভিযোগ।' এর আগে ঘুষের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জগন নিজে। বিধানসভায় চন্দ্রবাবু বলেছিলেন, 'এই অভিযোগ নিয়ে আরও প্রমাণ খুঁজছি আমরা।' (আরও পড়ুন: লাস ভেগাসের হামলাকারী এক মার্কিন সেনাকর্মী, বিস্ফোরণের আগে নিজের মাথায় করেন গুলি)
উল্লেখ্য, আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি সহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল ঘুষ কাণ্ডে। তার মধ্যে মার্কিন মুলুকে মামলায় তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে গৌতম আদানি, সাগর আদানিদের বিরুদ্ধে। তবে বিদেশি দুর্নীতি সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের কোনও অভিযোগ নাকি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আনা হয়নি। শেয়ার বাজারের ফাইলিংয়ে সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছিল এই বহুজাতিক সংস্থাটি। শেয়ার বাজার ফাইলিংয়ে আদানি গোষ্ঠীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সিকিউরিটিজ জালিয়াতি ষড়যন্ত্র, অনলাইন লেনদেন জালিয়াতি ষড়যন্ত্র, এবং সিকিউরিটিজ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে আদানির বিরুদ্ধে। তবে বিদেশি দুর্নীতি সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের কোনও অভিযোগ নাকি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আনা হয়নি।
উল্লেখ্য, ভারতের সরকারি আধিকারিকদের ২৬.৫ কোটি ডলারের ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আদানি এবং আজিউর পাওয়ার গ্লোবাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে। রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা এবং কর্মকর্তাদের ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ এবং মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। তবে আদানি গোষ্ঠী নিজেদের ফাইলিংয়ে দাবি করে, ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গৌতম আদানির নাম নেই। সেই অভিযোগে অভিযুক্ত আজিউর পাওয়ার গ্লোবাল লিমিটেডের এক কর্তা এবং এক কানাডিয়ান বিনিয়োগকারী।
এর আগে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, আদানি নাকি ভারতীয় আধিকারিকদের ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২৬.৫ কোটির ডলারেরও বেশি ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে সৌরশক্তি সরবরাহের লাভজনক চুক্তি পেয়েছিল আদানি। এই চুক্তিগুলো থেকে ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা অর্জনের আশা করা হয়। যদিও এই সব অভিযোগই অস্বীকার করে আদানি গোষ্ঠী। আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতীয় আধিকারিকদের ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল তারা। এরই মাধ্যমে আমেরিকা এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে তারা টাকা তুলেছিল বাজার থেকে। দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালের জুলাই এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারি আধিকারিকদেরও সেই সময় ঘুষ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই সময় অন্ধ্রে ছিল জগন মোহন রেড্ডির সরকার।