আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত চন্দন দাসকে গ্রেফতার করল পুলিশ। অভিযোগ, চন্দন দাসই নাকি কিরিচ হাতে আইনজীবীকে কুপিয়েছিলেন। সেই সময় তার পরনে ছিল কমলা রঙের গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট। জানা গিয়েছে, গতরাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেল স্টেশনের কাছ থেকে চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনার দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। বাকি আরও অনেকে সাইফুলকে মারতে থাকেন। পুলিশ দাবি করছে, তারা নাকি খুনের ভিডিয়ো হাতে পেয়েছে। সেই ভিডিয়ো ফুটেজ দেশে শনাক্ত করা হয়েছে ধৃতদের। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সেই আইনজীবীকে মারছে। এর মধ্যে দু'জন হেলমেট পরে থাকা ব্যক্তি কুপিয়েছে সাইফুলকে। (আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা, গর্জে উঠলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা)
আরও পড়ুন: মণিপুর হিংসায় ব্যথিত ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক, অকপটে বললেন - ‘যা ঘটছে, তা…’
আরও পড়ুন: '...গুজরাট ২০০২-এর মোদীকে ফেরত চাই', বাংলাদেশ নিয়ে এ কী বললেন তথাগত?
প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১০ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অভিযোগ উঠছে, ইচ্ছে করে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী যাতে মামলা না লড়েন, তার জন্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। (আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশ ভেঙে পৃথক হিন্দুদেশ...', 'ফর্মুলা' বাতলে দিলেন প্রাক্তন সেনা কর্তা!)
আরও পড়ুন: 'ইউনুসের চামড়া, গুটিয়ে দেব...', বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক শিলিগুড়িতে
আরও পড়ুন: হিন্দু উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ে!
এর আগে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল - রুমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস ও মনু মেথরকে। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুগামী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট তিনটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। মোট ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেই সব মামলায়। এছাড়াও মামলায় অভিযুক্ত আরও ১ হাজার ৩০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। সেদিনের সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। (আরও পড়ুন: 'এক মুখ্যমন্ত্রীর তো কথার ওজন থাকবে', মমতার মন্তব্য এখনও হজম হচ্ছে না ইউনুসদের)
আরও পড়ুন: 'পরিস্থিতি ভালো করতে আমাদের পাঠানো হোক বাংলাদেশে', বললেন মমতার মন্ত্রী
বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছে। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।