বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে অপ্রাকৃতিক যৌনমিলন করলে সেটা স্বামীর কোনও শাস্তি হতে পারে না। এমনকী স্ত্রীর সঙ্গে যদি জোর করেও অপ্রাকৃতিক যৌনতায় লিপ্ত হয় স্বামী তাহলেও স্বামীকে অপরাধী করা যায় না। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যায় না। স্ত্রীর সম্মতি না নিয়ে অপ্রাকৃতিক যৌনমিলন করলেও তাতে শাস্তি পেতে পারে না স্বামী। এই পর্যবেক্ষণ ছত্তিশগড় হাইকোর্টের। এমন একটি মামলা হয়েছিল ছত্তিশগড় হাইকোর্টে। যেখানে স্ত্রীর সঙ্গে অপ্রাকৃতিক যৌনতা করেছিলেন স্বামী। তার ফলে ওই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় স্ত্রীর। এই ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, মহিলার পেরিটোনাইটিস এবং রেকটাল ছিদ্র ছিল।
এদিকে বৈবাহিক ধর্ষণ ভারতীয় আইনে অপরাধ নয় এখন। আর ছত্তিশগড় হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণের ফলে অপ্রাকৃতিক যৌনতা শাস্তির আওতার বাইরে। তাই যাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল তাঁকে খুনের দায়ে জেলে ভরা গেল না। নিম্ন আদালত খুনের দায়ে জেল হেফাজত দিলেও ছত্তিশগড় হাইকোর্ট মুক্তি দিয়েছে। আর এটা খুন নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে। বিচারপতি নরেন্দ্র কুমার ব্য়াসের বেঞ্চের মতে, ‘স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতি গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্ত্রী বয়স যদি ১৫ বছরের কম না হয় তাহলে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর কোনও ধরনের যৌনতাকেই ধর্ষণ বলা যায় না। আর সেই হিসেবেই অপ্রাকৃতিক যৌনতার ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতিরও গুরুত্ব থাকে না। সুতরাং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬, ৩৭৭ মামলার বৈধতা নেই।’
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর মামলা থেকে সরে দাঁড়াল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ
অন্যদিকে বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে আগে একটি মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে এই বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে আবেদন করা হয়। কিন্তু তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে যাওয়ায় সেই শুনানি স্থগিত হয়ে যায়। এবার নতুন বেঞ্চ এই বিষয়টি শুনবে। কেন্দ্রীয় সরকার এটা বজায় রাখে যে, বিবাহের প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা অপরিহার্য এবং বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলার প্রয়োজন নেই। তাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে নেই। শুনানির সময়, কেন্দ্রীয় সরকার আরও বলেছে যে, বিবাহিত মহিলার সম্মতি রক্ষার জন্য সংসদ বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে।
এছাড়া এই ঘটনার সূত্রপাত হয় প্রায় ৮ বছর আগে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে অপ্রাকৃতিক যৌনতায় লিপ্ত হন স্বামী। এমনই অভিযোগ ওঠে স্বামীর বিরুদ্ধে। কারণ ওই অপ্রাকৃতিক যৌনতার পরই স্ত্রী এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। অবশেষে মারাও যান। মৃত্য়ুকালীন জবানবন্দিতে ওই মহিলা জানান, তাঁর সঙ্গে জোর করে অপ্রাকৃতিক যৌনতায় লিপ্ত হয়েছিল স্বামী। ওই মামলাতেই আদালত জানিয়ে দিল, স্ত্রীর বয়স ১৫ বছরের কম না হলে স্বামী–স্ত্রীর যৌনতাকে ধর্ষণ বলা যায় না। যদিও তাতে স্ত্রী সম্মতি নাও থাকে তাও।