কেউ যদি 'বারবার আত্মহত্যা করার হুমকি দেন, তাহলে সেটাও আদতে নিষ্ঠুরতা'। এক মামলা প্রসঙ্গে এমনই পর্যবেক্ষণ করল ছত্তিশগড় হাইকোর্ট। সেই মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। একইসঙ্গে, ওই ব্যক্তির স্ত্রীর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
ওই মহিলার দাবি ছিল, তাঁর স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন খারিজ করে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ককেই পুনারায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বীকৃতি দিতে হবে। যা আদালত খারিজ করে দিয়েছে।
বিচারপতি রজনী দুবে ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমার জয়সওয়ালের বেঞ্চে এই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর বেঞ্চের তরফে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই দাবি আইনজ্ঞ মহলের।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র প্রতিবেদন অনুসারে, ওই পর্যবেক্ষণে বলা হয়, 'যখন এই ধরনের কোনও মন্তব্য (আত্মহত্যার হুমকি) বারবার দেওয়া হয়, তখন কোনও স্বামী বা স্ত্রীই শান্তিতে বাঁচতে পারেন না। এই মামলায় স্বামী যেসমস্ত প্রমাণ দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট গিয়েছে যে তাঁর স্ত্রী মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যা করার হুমকি দিতেন। এমনকী, তিনি ইতিমধ্যেই বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিলেন।'
আদালতের বক্তব্য হল, নৃশংসতা বা নিষ্ঠুরতা হল এমন একটি আচরণ, যা স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে করেন এবং তার ফলে যিনি এই আচরণ করছেন, তাঁর বিপরীতে থাকা মানুষটির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আদালত আরও বলেন, একজন স্ত্রী যদি বারবার, লাগাতার এমন আচরণ করেন, তাহলে তাঁর স্বামীকে এক চরম যন্ত্রণা, কষ্ট ও মানসিক বিভীষিকার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বিবাহ আইন অনুসারে, এটাও এক ধরনের নিষ্ঠুরতা।
এই রায়ের মাধ্যমেই ছত্তিশগড় আদালত ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের প্রক্রিয়া আইনত সম্পূর্ণ করেছে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তাঁর স্ত্রীকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ওই ব্যক্তি এককালীন খোরপোশবাবদ একবারই ওই টাকা তাঁর স্ত্রীকে দেবেন।
আদালত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যে দম্পতিকে নিয়ে এই মামলা, তাঁদের বিয়ে হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কিন্তু, বৈবাহিক অশান্তির জেরে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন।
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট স্বামী প্রথম থেকেই ডিভোর্সের আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। অন্যদিকে, তাঁর স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করলেও ডিভোর্সের বিরোধী ছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, স্বামীর আবেদন খারিজ করে আদালত এই বিয়ে টিকিয় রাখার বন্দোবস্ত করুক।