ওরা পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। ছোট ছোট পড়ুয়াদের জীবনে নেমে এসেছিল ঘন অন্ধকার। কারণ প্রাথমিক স্কুলগুলি দু’দশক ধরে বন্ধ ছিল। বোমা, গুলি থেকে মাওবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্কুলগুলি খুলতে পারেনি। তাই শিশুদের শিক্ষা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল। অবশেষে ২০ বছর পর সেই সমস্যার সমাধান হল। ৪১টি স্কুল বন্ধ হয়ে পড়েছিল। যা কয়েকমাস হল খুলতে শুরু করেছে। তাই শোনা যাচ্ছে শিশু পড়ুয়াদের কলরব। এ, বি, সি, ডি থেকে শুরু করে নামতা আবার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে। ছত্তিশগড়ের শিক্ষা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মাওবাদী হানার জেরে বস্তার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে স্কুলগুলি বন্ধ ছিল।
বিজাপুর জেলায় সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখানের সব স্কুল বন্ধ ছিল। এবার ৩৪টি স্কুল খুলে গিয়েছে। পড়ুয়ারা আসতে শুরু করেছে। আর সুকমায় ৫টি এবং নারায়ণপুরে দুটি স্কুল খুলেছে। পড়ুয়ারা যেন মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। শিক্ষার অধিকার এই শিশু পড়ুয়াদের মধ্যে ফিরে এসেছে। এতদিন যেন সেই অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিয়ে ছিল বলে তাদের দেখে মনে হচ্ছে। মাওবাদীদের চাপে এই সমস্ত স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এখানে। ২০০৫–০৬ সালে শিক্ষার অধিকার যেন কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন ৫৩২ জন ছাত্রছাত্রী স্কুলে নাম লিখিয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেক মেয়ে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: রোগী কল্যাণ সমিতিতে শুধুই চিকিৎসকরা, রাজনৈতিক নেতাদের সরিয়ে দিলেন মমতা
বিজাপুর জেলার মুদভেন্দি গ্রামের একটি স্কুলের দু’জন পড়ুয়া মাওবাদীদের আইইডি বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিল। এই বছরেরই মে এবং জুলাই মাসে। এখন প্রশাসন কড়া নজর দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। তবে এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, পড়ুয়ারা আবার স্কুলে ফিরে এসেছে বলে মনে করেন এক শিক্ষা দফতরের কর্তা। এই পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও চেয়েছিলেন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করুক। তাই নতুন করে পড়ার ব্যবস্থা চালু করার ছাড়পত্র দিয়েছে ছত্তিশগড় প্রশাসন। ২০০৭ সালে বিজাপুরে মাওবাদীর সন্ত্রাস ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গিত পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, তখন ৫১ টি মাওবাদী হানায় ৯৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য–সহ মোট ১৫৫ জন নিহত হয়। সেখানে এখন তা কমে গিয়েছে।
এখন মাওবাদী উপদ্রব অনেকটা কমে যাওয়ার পর প্রশাসন ও স্থানীয় আদিবাসীদের সহায়তায় স্কুলগুলি আবার চালু করা সম্ভব হয়েছে। এই বিষয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিব সিদ্ধার্থ কোমল পরদেশি বলেন, ‘মাওবাদী ও নকশালদের তাণ্ডবে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে তা আবার আমাদের জীবনে চালু হয়েছে। তাই জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী আরও ভাল করে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা আরও স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষ করে আগের উপদ্রুত এলাকাগুলিতে। দারিদ্র দূরীকরণের এটাই পথ।’