ধর্মের উর্ধ্বে জওয়ানদের বীরত্ব, মানবিকতা ও কর্তব্যবোধ। সমস্ত বর্ণের উর্ধ্বে জলপাই-ছাপ। তা আরও একবার প্রমাণ করলেন এক শিখ সিআরপিএফ জওয়ান। ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে জখম হন তাঁর এক সহযোদ্ধা জওয়ান। মুহূর্ত দেরি না করে ব্যান্ডেজ হিসাবে নিজের মাথার পাগড়ি খুলে তাঁর ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন ওই জওয়ান।
সর্দার বলরাজ সিং। সিআরপিএফ-এর কোবরা বাহিনীর ট্রুপার। কঠিন পরিস্থিতিতেও শত্রুর চোখে চোখ রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তাঁর সহজাত। সেই সঙ্গে সহজাত মাথা ঠান্ডা রেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
বিনা প্ররোচনায় অতর্কিতে শনিবার সর্দার বলরাজ সিং-সহ জওয়ানদের উপর হামলা চালায় মাওবাদীরা। পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েননি বলরাজরাও। সেই সময়েই হঠাত্ই গুলিবিদ্ধ হন তাঁরই সহযোদ্ধা জওয়ান অভিষেক পান্ডে।
অভিষেকের পা থেকে তখন গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। অন্যদিক থেকে সমানে গুলি বর্ষণ। এমন পরিস্থিতিতে হঠাত্ই নিজের মাথার পাগড়ি খুলে ফেলেন বলরাজ। কিন্তু শিখ ধর্মে যে পাগড়ি খোলা নিষেধ? কিন্তু সহযোদ্ধা বন্ধুকে তো বাঁচাতে হবে! শিখ ধর্মে তো সকলকে সাহায্যের শিক্ষাও দেওয়া হয়েছে! একই শিক্ষা কোবরা বাহিনীর কঠোর প্রশিক্ষণেও।
কালবিলম্ব না করে পাগড়ির কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেন অভিষেকের গুলির ক্ষত। রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এরপরেও অনেক লড়াই করে কোনওমতে অভিষেককে নিয়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা।
তাঁর এই বীরত্ব ও কর্তব্যপরায়ণতার কথা জানান ছত্তিশগড়ের এক আইপিএস অফিসার। প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় হিন্দুস্তান টাইমসে। সেই প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। তিনি লিখেছেন, 'শিখরা যেমন নিজেদের পাগড়িতে কাউকে হাত দিতে দেন না, তেমনই কাউকে সাহায্য করতে সেটি খুলতেও কুন্ঠা বোধ করেন না।'
শনিবার ছত্তিশগড়ের বাস্তার এলাকায় সিআরপিএফ জওয়ানদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে ২২ জন জওয়ানেরর মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৩১ জন। অতর্কিতে কাপুরুষোচিত হামলা চালায় মাওবাদীরা। অন্যদিকে পাল্টা প্রতিরোধ করেন জওয়ানরাও। এখনও পর্যন্ত ১২ থেকে ২০ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।