নোটবাতিল নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে আজ রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ ৪-১ ব্যবধানে সরকারের সিদ্ধান্তের মতে রায় দেন। বিচারপতি বিভি নাগরত্না অবশ্য নিজের রায়তে জানান, কেন্দ্রের তরফে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বেআইনি। এই আবহে মামলায় হেরে গেলেও তাতে নৈতিক জয় খুঁজছেন মামলাকারী আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম। টুইট করে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে চিদাম্বরম বলেন, 'একবার মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট আইনটি ঘোষণা করলে আমরা তা মানতে বাধ্য। যদিও এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিচারপতিরা নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্তের প্রজ্ঞাকে সমর্থন করেননি; বিচারপতিরা এও বলেননি যে নোট বাতিলের উদ্দেশ্যগুলি অর্জিত হয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে, লক্ষ্যগুলি আদৌ অর্জিত হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মিলেছে এই রায়তে।'
দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আরও লেখেন, 'আমরা খুশি যে একজন বিচারপতি তাঁর রায়ে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলেছেন এবং এই সিদ্ধান্তের অনিয়মগুলিকে তুলে ধরেছেন। এটি সরকারের কব্জিতে একটি চড়। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসের বিখ্যাত সব ভিন্নমতের রায়ের মধ্যে লিপিবদ্ধ হবে নোট বাতিল সংক্রান্ত ভিন্নমতের রায়টি। সংখ্যালঘু রায় সংসদের সম্পূর্ণ আইন প্রণয়ন ক্ষমতা এবং নির্বাহী সরকারের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে গভীর পার্থক্য তুলে ধরেছে। আমরা খুশি যে সংখ্যালঘুদের রায় গণতন্ত্রে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে সংসদ আর জনগণের উপর বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবে না।'
উল্লেখ্য, ৫৮টি মামলার প্রেক্ষিতে আজ রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রের নোট বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে গলদ ছিল না। তবে বেঞ্চের পাঁচজন সদস্যের মধ্যে একমাত্র বিচারপতি নাগারত্না নিজের রায়তে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত বেআইনি ছিল। তাঁর রায়, ১০০০ ও ৫০০ টাকার সমস্ত নোট নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে না কেন্দ্র। তবে ৪-১ ব্যবধানে কেন্দ্রের নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকল।
এদিন বিচারপতি নাগারত্না বলেন, 'আমার বিবেচনায়, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নোট বাতিলের পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা বেআইনি ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের এত পরে আগের সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না। তবে ২০১৬ সালে বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত ক্ষমতার প্রয়োগ ছিল মাত্র। সেই সিদ্ধান্ত আইনের পরিপন্থী এবং তাই তা অবৈধ।' তিনি তাঁর রায়তে আরও বলেন, 'নিঃসন্দেহে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সৎ উদ্দেশে নেওয়া হয়েছিল। তবে শুধু মাত্র আইনি দৃষ্টিতে দেখতে গেলে নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত বেআইনি।' প্রসঙ্গত, মামলাকারীদের আইনজীবী পি চিদরম্বম দাবি করেছিলেন, নোট বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরবিআই-এর পরামর্শ নিতে হয় কেন্দ্রকে। তবে এই ক্ষেত্রে নাকি আরবিআই-এর সঙ্গে কেন্দ্রের বৈঠকের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।