যে কোনও শিশুরই ভালোভাবে বাঁচার অধিকার আছে। তা সে অনাথ শিশু হলেও একই কথা প্রয়োজ্য। অনাথ শিশুদের ক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণ পদ্ধতি এই ভালোবাসা, যত্ন এবং একটি স্থায়ী পরিবার পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ভারতে বহু মানুষই মনে করেন, শিশুদের জন্য এই ধরনের স্থিতিশীল, ভালোবাসাপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশ প্রদান করতে পারেন শুধু বিষম লিঙ্গে বিবাহিত যুগলরাই। সেই ধারণায় যে বদলের সময়ে এসেছে, তা প্রমাণ করে দিলেন CJI। মঙ্গলবার সু্প্রিম কোর্টে এই নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি
নিয়মে কী ধরনের বদলের প্রসঙ্গ উঠেছে:
আগে কী ছিল?
- দত্তক নেওয়ার আইনি কাঠামো প্রাথমিকভাবে জুভেনাইল জাস্টিস আইন, ২০১৫ এবং শিশুদের দত্তক নেওয়ার নির্দেশিকা, ২০১৫ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং দক্ষ হওয়ার বিষয়টিও এই আইনই নিশ্চিত করে।
- ভারতে এত দিনের আইনি কাঠামো স্পষ্টভাবে সমকামীদের শিশু দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বলছিল না। তবে বিষয়টি যে আইন স্বীকৃত নয়, তা পরিষ্কার ছিল।
- এই সমস্যাটি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই আইন বিশেষজ্ঞ, অ্যাক্টিভিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মীরা সরব ছিলেন। এবং সমকামী যুগল যাতে সন্তান দত্তক নিতে পারেন, তার পক্ষে অনেকেই সওয়াল করছিলেন। সেই জায়গাতেই বিষয়টি আটকে ছিল।
সমকামী দম্পতিদের ক্ষেত্রে এত দিনের নিয়ম কী?
- ভারতে সমকামী দম্পতিদের এত দিন ধরে সন্তান দত্তক নেওয়ার অনুমতি নেই। ভারতে দত্তক নেওয়ার আইন শুধুমাত্র বিষমকামী দম্পতিদের দত্তক নেওয়ার যোগ্য বলে স্বীকৃতি।
- দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি জুভেনাইল জাস্টিস আইন, ২০১৫ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল, যা ‘দম্পতি’ হিসাবে ‘বিবাহিত পুরুষ এবং মহিলা’কেই সংজ্ঞায়িত করছিল।
- শুধু বিবাহিত হলেই হবে না, যাঁরা কমপক্ষে দুই বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করছেন তাঁদেরই শুধু এই সুযোগ দেওয়া হত।
নতুন সওয়ালের প্রেক্ষাপট কী?
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট এলজিবিটিকিউ প্লাস ব্যক্তিদের অধিকার স্বীকার করে এবং স্বীকৃতি দেয় যে, তাঁরা আইনের অধীনে সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। ২০১৮ সালের এই যুগান্তকারী রায়ে ভারতে সমকামিতাকে অপরাধমুক্ত করার পথ প্রশস্ত হয়। তার পর থেকেই অনেকে বলছিলেন, এবার সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়মের ক্ষেত্রে বদল কাঙ্ক্ষিত।
নতুন আলোচনার সূত্র কী?
- এবার থেকে সমকামী যুগলেরও সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার পাওয়া উচিত বলেই মনে করছিলেন অনেকে। এমনকী অবিবাহিত যুগলেরও এবার সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার পাওয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।
- Central Adoption Resource Authority (CARA)-র তরফে এত দিন যে সমকামীদের সন্তান দত্তকে সায় দেওয়া হত না, তা সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৫-কে অমান্য করা বলেও মনে করেছেন প্রধান বিচারপতি।
শেষ পর্যন্ত কী হল?
শেষ পর্যন্ত সমকামিতাকে অধিকার দেওয়া হলেও, সর্বোচ্চ আদালতে সমকামী যুগলকে সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দেওয়া হল না। বিচারপতিদের মধ্যে ৩-২ ভোটে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল, সমকামী যুগল এবং অবিবাহিত যুগলরা সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার পাচ্ছেন না।