আজ, ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েও, ভারতে বাল্য বিবাহের প্রভাব রীতিমত উদ্বেগের বিষয়। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সত্ত্বেও দেশে এখনও বাল্যবিবাহ বর্তমান। ইন্ডিয়া চাইল্ড প্রোটেকশন।স্টাডি গ্রুপের 'টুওয়ার্ডস জাস্টিস: এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ' প্রতিবেদনটি বলেছে, ভারতে প্রতি মিনিটে তিনজন মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়।
প্রতিদিন চার হাজারের বেশি বাল্যবিবাহ
২০২২ সালে, সারা দেশে প্রতিদিন মাত্র তিনটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছিল। যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বরের বয়স ছিল ২১ বছরের বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ে শিশুর দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে, বয়স্ক পুরুষরা নিজেদের কর্তৃত্ব ফলায়। প্রতিবেদনটি ২০১১ সালের আদমশুমারি, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো এবং জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে ২০১৮-২০২২ সালের ডেটাতে মাত্র ৩,৮৬৩টি বাল্যবিবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু, আদমশুমারির হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর ১৬ লক্ষ বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন চার হাজারের বেশি বাল্যবিবাহ হয়। জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ অনুযায়ী, ২০-২৪ বছর বয়সী ২৩.৩ শতাংশ মহিলা ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে করেছিলেন।
আসামে বাল্যবিবাহ কমেছে
এদিকে আবার, বাল্যবিবাহ রোধের পরিপ্রেক্ষিতে, আসাম কেস স্টাডি রিপোর্ট বলছে, ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে রাজ্যের ২০ জেলার ১,১৩২ গ্রামে বাল্যবিবাহ ৮১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত বছর নাকি এই অপরাধে তিন হাজারের বেশি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। রাজ্যের গ্রামগুলিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষা বলছে, রাজ্যের কঠোর আইন বাল্যবিবাহের সংখ্যা হ্রাসের একটি প্রধান কারণ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে আসামের ২০ জেলার মধ্যে ১২টি জেলার ৯০ শতাংশ মানুষ আস্থা প্রকাশ করেছেন যে এফআইআর এবং এই ধরনের ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের মতো আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ কার্যকরভাবে বন্ধ করা যেতে পারে।
বাল্যবিবাহ মামলার নিষ্পত্তি করতে ১৯ বছর লাগবে
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সারা দেশে বাল্যবিবাহের মোট ৩,৫৬৩ মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে শুধুমাত্র ১৮১ মামলা সফলভাবে সমাধান করা হয়েছে, অর্থাৎ বিচারাধীন মামলার হার ৯২ শতাংশ। বর্তমান হার অনুযায়ী, বাকি ৩,৩৬৫ মামলা নিষ্পত্তি করতে ১৯ বছর সময় লাগবে।
যদিও, প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা করায় সময়, 'বাল্য বিবাহ মুক্ত ভারত'-এর প্রতিষ্ঠাতা ভুবন রিভু বলেছেন, আসাম দেখিয়েছে যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে সরকারের আইনি পদক্ষেপ, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। তাই বাল্যবিবাহ মুক্ত ভারত গড়তে আসামের এই বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।