অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে তিব্বতে ইয়ারলাং সাংপো নদের উপরে গুরত্বপূর্ণ রেলসেতু তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে সম্পূর্ণ করছে চিন। এই নদই পরে ভারতে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নদ হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
ভারত সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে পরিকাঠামো মজবুত করতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে বেজিং। বিশেষ করে তিব্বত সংলগ্ন অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে চিন সরকার।
গতকাল শনিবার ইয়ারলাং সাংপো নদের উপরে রেলসেতু নির্মাণ সেই পরিকল্পনারই অংশ। জানা গিয়েছে, সেতুর এক বড় অংশের নির্মাণ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ করেছে চিন সরকারের অধীনস্থ কিছু সংস্থা। দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের টিবেট অটোনমাস রিজিয়ন-এর (TAR) নিয়িইংচির সঙ্গে চিন অধিকৃত তিব্বতের রাজধানী লাসার সংযোগ স্থাপনে নির্মীয়মান ৪৩৫ কিমি দীর্ঘ রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাহাড়ের মাঝে থাকা এই ৫২৫ মিটার লম্বা ডবল লেন সেতু।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এই রেলপথ অসামরিক ও সামরিক দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হতে পারে। মনে করা হচ্ছে, এই রেলপথ অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত পার করে চিনের দাবি করা দক্ষিণ তিব্বত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছবে।
গত ৭ এপ্রিল চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ঘোষণা করে, নির্মীয়মান রেলপথে থাকা ৪৭টি সুড়ঙ্গের শেষ দু’টির কাজ শেষ হয়েছে।
লাসা-নিইয়িংচি রেলপথের ৭৫ শতাংশই সেতু ও সুড়ঙ্গের সাহায্যে তৈরি হয়েছে। রেলপথের ৯০ শতাংশের বেশি তিব্বত সমতলভূমির উপর দিয়ে গিয়েছে। এই রেলপথের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে ১৫,০০০ ফিট। তিব্বতের প্রথম বৈদ্যুতিক রেলপথে ঘণ্টায় গড়ে ১৬০ কিমি বেগে ট্রেন দৌড়তে পারবে।
২০১৪ সালের শেষ থেকে ররেলপথ তৈরির কাজ শুরু করে চিন সরকারের অধীনস্থ একাধিক সংস্থার সম্মেলন। ২০২১ সাল থেকে এই পথে ট্রেন পরিষেবা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের। পাশাপাশি, নিয়িইংচির সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশে TAR অতিক্রম করে সড়ক সংযোগ ব্যবস্থাও তৈরি করে ফেলেছে চিন। ২০১৮ সাল থেকেই চালু হয়ে গিয়েচে লাসা-নিয়িইংচি যোগাযোগকারী ৪০৯ কিমি দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে। এই পথে ঘণ্টায় ৮০ কিমি বেগে চললে মাত্র ৫ ঘণ্টায় লাসা থেকে নিয়িইংচি পৌঁছানো যায়।
একই সঙ্গে ২০১৯ সালের শেষে নিয়িইংচি এলাকায় ৫টি বিমানবন্দরও তৈরি হয়েছে। ১০১টি রুটে এই অঞ্চলে উড়ান পরিষেবা দিচ্ছে ১১টি সংস্থা।
এ ছাড়া, অরুণাচল সংলগ্ন প্রান্তিক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যাযাবর গোত্রের তিব্বতি মেষপালকদের পাকাপাকি বসবাসের বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করেছে চিন সরকার।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে নিয়িইংচির পরিকাঠামো, জনসেবা ও পর্যটন উন্নয়নে ২৬টি নির্মাণ সংস্থা কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের খরচ জোগাচ্ছে দক্ষিণ চিনের শিল্পসমৃদ্ধ গুয়াংডং প্রদেশ। ২০২০ সালে এই অঞ্চলে ৫১টি প্রকল্পের পরিকল্পনা কতরেছে গুয়াংডং প্রশাসন।