নেপাল ও চিনের সীমান্ত–ঘেঁষা প্রত্যন্ত হুমলা জেলায় ১১টি বিল্ডিং নির্মাণ করেছে চিন। ওই এলাকা নিজস্ব ভূখণ্ড বলে দাবি করেছে নেপাল। সীমানা নিয়ে এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে জটলা। এমনই দাবি করা হয়েছে নেপালের সংবাদমাধ্যমে।
বেশ কয়েক বছর আগে নেপাল এই অঞ্চলে একটি রাস্তা তৈরি করার পর সেখান থেকে এক সীমানা স্তম্ভ উধাও হয়ে যায়। এবং সেখানেই চিন এই বিল্ডিংগুলি তৈরি করেছে। সম্প্রতি এই বিতর্কিত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া নেপালি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে এই অঞ্চলে কেবল একটি ঝুপড়ি ছিল।
রবিবার দফতরের অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন স্থানীয় নামখা গ্রামীণ পুরসভার চেয়ারম্যান বিষ্ণু বাহাদুর তামাং। তিনি জানিয়েছেন, চিনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যে এলাকায় তারা ওই বিল্ডিংগুলি নির্মাণ করেছে, সেটা তাদের সীমানার অন্তর্গত। চিনের সুরক্ষা ও সীমান্ত বাহিনী যে এই বিল্ডিংগুলি নির্মাণ করছে সে খবর নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জানানো হয়েছে।
জেলার প্রধান কর্মকর্তা চিরঞ্জিবি গিরির নেতৃত্বে একটি দল রবিবারই ওই এলাকা পরিদর্শন করে। তাদের কাছে চিনের সুরক্ষা আধিকারিকরা দাবি করেছেন, ওই বিল্ডিংগুলি যেখানে রয়েছে সেখান থেকে তাদের এলাকা আরও এক কিলোমিটার দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে। যদিও ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’–কে বিষ্ণু বাহাদুর তামাং জানিয়েছেন, ওই বিল্ডিংগুলি থেকে ২ কিলোমিটার উত্তর পর্যন্ত নেপালের সীমানা এলাকা রয়েছে। বিতর্কিত ওই এলাকার ১১টি বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটিতে সুরক্ষা বাহিনী থাকলেও বাকিগুলি খালি।
রবিবার নেপালি কর্মকর্তারা ওই বিতর্কিত জায়গায় পৌঁছলে চিনা সুরক্ষা কর্মীরা একটি ট্রাক, একটি ট্যাঙ্কার এবং একটি জিপে করে সেখানে আসেন। তাঁরা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে নেপালি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং এ ব্যাপারে আলোচনা করতে তাঁদের সীমান্তে যেতে বলা হয়।
বিষ্ণু বাহাদুর তামাং বলছিলেন, ‘ওই এলাকায় আমরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ছিলাম। আমরা পৌঁছনোর পর চিনা সেনাবাহিনী এবং সুরক্ষা আধিকারিকদের একটি দল সেখানে আসে। তবে তাঁরা জানান যে এ ব্যাপারে ওই এলাকায় কোনও আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা তাঁদের কাছে দাবি জানাই যে ওই এলাকা আমাদের। কিন্তু তাঁরা একটি মানচিত্র দেখিয়ে এলাকাটি তাঁদের বলে দাবি করে। এর পর আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ি।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকটি একটি সরকারী কর্মকর্তা, সুরক্ষা সংস্থাগুলির প্রধান এবং হুমলার স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি দলকে নামখা গ্রামীণ পৌরসভায় প্রেরণ করেছেন, যা সপ্তাহের শেষে প্রত্যাশিত।
ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে সরকারি আধিকারিক, সুরক্ষা সংস্থাগুলির প্রধান এবং হুমলার স্থানীয় সরকারি প্রতিনিধিদের একটি দলকে নামখা গ্রামীণ পুরসভায় পাঠানো হয়েছে। তাদের বিতর্কিত ওই এলাকা পরিদর্শন করে এই সপ্তাহের শেষে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
হুমলার সাংসদ চাক্কা বাহাদুর লামা বলেন, ‘এই এলাকার একটি সীমানা স্তম্ভ উধাও হওয়ার পর থেকেই এই বিরোধ দেখা দিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত উভয় পক্ষ ওই নিখোঁজ স্তম্ভের অবস্থান নির্ধারণ করতে না পারে ততক্ষণ এই বিরোধ চলতে থাকবে। প্রায় ১২ বছর আগে নেপালি ভূখণ্ডে একটি রাস্তা নির্মাণের সময় স্তম্ভটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে জায়গায় চিনারা ওই বিল্ডিংগুলি নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে সেই এলাকায় একটি পুরনো ব্যবসায়িক রুট রয়েছে। বহু আগে ওই রুটে ইয়াক–টানা গাড়িতে নেপাল এবং তিব্বতের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন হত।’
স্থানীয় এক আধিকারিক জানান, ২০১৫ সালে একটি বৈঠকের সময় নেপাল ও চিন নিখোঁজ ওই স্তম্ভটির অবস্থান নির্ধারণে সম্মত হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। যদি একেবারে শেষের সীমানা স্তম্ভ থেকে নিখোঁজ স্তম্ভের অবস্থানের দিক চিহ্নিত করে একটা সরলরেখা টানা হয় তবে সেখানেই সমস্যার জট খুলতে পারে। তা থেকে বোঝা যাবে যে ওই বিতর্কিত জমিটি নেপালের মধ্যেই পড়ে।
নেপাল সরকারের অবহেলার জন্য আজ এই পরিস্থিতি, এমনই জানিয়েছেন সাংসদ চাক্কা বাহাদুর লামা। তাঁর কথায়, সীমান্ত এলাকায় নেপালের সুরক্ষা বাহিনী চিনের থেকে অনেকটাই কম। এই কারণেই হয়তো এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চায়নি নেপাল সরকার।
কাঠমান্ডুতে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র ঝাং সি ‘দ্য পোস্ট’–কে একটি ই–মেলে জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যম যে সব বিল্ডিংগুলির কথা বলেছে সেগুলি চিনের সীমান্ত এলাকার মধ্যেই রয়েছে। নেপাল সরকার অবশ্যই ফের এটি পরীক্ষা করে যাচাই করে নিতে পারে। তিনি আরও জানান, চিন সর্বদাই নেপালের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে এবং নেপালের পক্ষ থেকে কোনও প্রশ্ন থাকলে সেটা একসঙ্গেই যাচাই করিয়ে নেওয়া যেতে পারে।