অভিনব সামরিক কৌশল অবলম্বন করে প্রতিবেশীদের থেকে একটু একটু করে বিস্তৃত অঞ্চল ছিনিয়ে নিচ্ছে চিন। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের (এলএসি) স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করতে চিন ‘সালামি-স্লাইসিং’ কৌশল ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে চিন প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ করে এবং প্রতিবেশী দেশের স্নায়ুর পরীক্ষা করে। তারপর দেখা যায় প্রতিরোধের মুখোমুখি হলে তাদের প্রতিপক্ষ পিছিয়ে যায়। চিন এই ‘সালামি স্লাইসিং’ কৌশলের অধীনে নেপাল এবং ভুটানের সীমান্ত এলাকায় বিস্তৃত অঞ্চল দখল করেছে বলে জানা গিয়েছে।
সালামি স্লাইসিং হল প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে ছোট সামরিক অভিযান পরিচালনা করে বিশাল এলাকা দখল করা। এই ধরনের অপারেশনগুলি খুবই ছোট পরিসরে পরিচালিত হয় এবং এর প্রেক্ষিতে প্রতিবেশী দেশ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা বুঝতে পারে না। ভারতের মতো প্রতিবেশীদের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই চিন ২০২১ সালের অক্টোবরে 'ভূমি সীমানা আইন' গ্রহণ করেছিল। এই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই আইন কার্যকর হয়েছে। পলিসি রিসার্চ গ্রুপ (পিআরজি) জানিয়েছে যে এই আইনটির মাধ্যমে চিন দাবি করেছে যে তারা দৃঢ়ভাবে তাদের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষা করবে। তবে আদতে এই আইনের আড়ালে তারা অন্য দেশের থেকে জমি ছিনিয়ে নেবে। এতদিন যে জমি তারা অনৈতিক ভাবে নিজেদের বলে দাবি করত, সেই জমি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে বৈধতা প্রদান করতেই এই আইন।
চিন তাদের দেশের 'নাগরিকদের' 'আদর্শ গ্রামে' যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। চিনা সীমান্তে অবস্থিত মডেল জিয়াওকাং গ্রামের একজন গ্রামবাসী একটি তিব্বতি দৈনিক সংবাদপত্রে দাবি করেন যে সীমান্তবর্তী গ্রামে বাস করার জন্য তাঁকে পাঁচ হাজার ইউয়ানের ‘সীমা বার্ষিক ভর্তুকি’ এবং ৮৮৭১ ইউয়ান পরিবেশগত ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। তিব্বতি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে যে চিনা সরকার এই ধরনের প্রকল্পের অধীনে প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার লোকের জন্য ৬২ হাজারেরও বেশি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছে। রাস্তা ছাড়াও এসব বাড়িতে থাকবে জল, বিদ্যুৎ, যোগাযোগের ব্যবস্থা, নেটওয়ার্ক, স্কুল, স্বাস্থ্য ও বীমা।
প্রতিবেদনে শিগাতসে প্রিফেকচারের গেরু গ্রামে সীমান্ত টহল এবং জীবনকেও বর্ণনা করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে যে গ্রামের প্রায় ১০০ জন লোক সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য মোটরসাইকেলে সীমান্তে নিয়মিত টহল দেয়। এছাড়াও, ওচারে নিযুক্ত চিনা কর্মীরা প্রতি সোমবার চিনা পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য সীমান্ত পিলারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এভাবেই এই চিনা বসতিগুলি আস্তে আস্তে প্রতিবেশী দেশের এলাকাতেও টহল শুরু করে। পরে তারা দাবি করে সংশ্লিষ্ট দেশের সেই এলাকা আদতে চিনের। এবং সেখানে দখলদারি শুরু করে। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে নেপাল প্রত্যক্ষ করেছে যে কীভাবে তাদের জমি নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন। আন্তর্জাতিক সীমান্ত অগ্রাহ্য করে অন্য দেশের সীমান্তে অনুপ্রবেশ চালিয়ে যাচ্ছে চিন। ভুটান ও ভারতও চিনের এই সালামি স্লাইসিংয়ের সাক্ষী থেকেছে।