তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রের উচ্চ অববাহিকায় (ইয়ারলুং সাংপো) সদ্যই বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে বেজিং। আর তারপর থেকেই চিনের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতি অনুমান করে এবার গোটা বিষয়টিকেই কিছুটা লঘু করে দেখানোর চেষ্টা শুরু করল চিনের সরকার।
শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং। তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হলে সংশ্লিষ্ট নদীর গতিপথের নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত অঞ্চলগুলির কোনও ক্ষতি হবে না। কয়েক দশকের সমীক্ষার পরই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন মাও নিং।
তথ্য বলছে, তিব্বতের যে অংশে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের (১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের) সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিন, তা হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের সেই অংশের অন্তর্গত, যেখানকার ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক এবং বাস্তুতন্ত্রগত অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল।
কারণ, এই এলাকা এক স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রে ভরপুর। উপরন্তু, এই অঞ্চলের নীচেই রয়েছে টেকটনিক প্লেটের সীমান্ত এলাকা। যা সামান্য সংঘাতেও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
যদিও মাও নিংয়ের বক্তব্য হল, এই জায়গায় বাঁধ নির্মাণের জন্য চিন কয়েক দশক ধরে সমীক্ষা চালিয়েছে। সমস্ত বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তবেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। এই প্রকল্পের জেরে যাতে পরিবেশের ভারসাম্য কোনওভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে।
মাও নিংয়ের আরও দাবি, এই প্রকল্পের কারণে যাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির বাসিন্দাদের কোনও সমস্য়া বা বিপর্যয়ের মুখে না পড়তে হয়, তা নিশ্চিত করতে সেইসব দেশগুলির সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে বেজিং। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিশ্বের বৃহত্তম এই বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে চিন। ভারত সীমান্তের খুব কাছে তিব্বতে এই দানবাকার বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
হিমালয়ের যে অংশে ব্রহ্মপুত্র এক বিরাট ইউ-টার্ন নিয়ে ভারতের অরুণাচলপ্রদেশে প্রবেশ করেছে, সেখানেই এক বিরাট গিরিখাত জুড়ে এই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
মনে করা হচ্ছে, এই বাঁধ নির্মাণের সামগ্রিক খরচ ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৩৭ মার্কিন ডলার) ছাড়িয়ে যাবে। সেটা হলে এই প্রকল্পই হবে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে দামি পরিকাঠামোগত প্রকল্প। এই প্রকল্প তৈরি করতে অন্তত এক দশক সময় লাগবে।