পরপর টানা তিনবছর - ২০২৪ সালেও কমল চিনের জনসংখ্য়া। উল্লেখ্য, এর আগে একটানা প্রায় ছয় দশক ধরে চিনের জনসংখ্য়া শুধু বাড়েইনি, মারাত্মক হারে বেড়েছে। যার ফলে অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি-সহ নানা সমস্য়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। কিন্তু, এবার চিনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উলটো পথে হাঁটতে শুরু করেছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।
চিনের সরকারি হিসাব অনুসারে, ২০২৪ সালের একেবারে শেষে এসে সেদেশের জনসংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা কমেছে। যার পরিমাণ - ১.৪০৮ বিলিয়ন (১৪০ কোটি ৮০ লক্ষ)। বেজিংয়ের জাতীয় পরিসংখ্য়ান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে এই সংখ্যাটাই ছিল - ১.৪১০ বিলিয়ন (১৪১ কোটি)।
তবে, জনসংখ্যার এই হ্রাসে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে। যেমন - ২০২৩ সালে যে হারে জনসংখ্যা কমেছিল, সেই তুলনায় ২০২৪ সালে জনসংখ্য়া হ্রাসের হার কম। অন্যদিকে, ২০২২ সালে চিনের জনসংখ্যা যে পরিমাণ কমেছিল, ২০২৪ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ হারে কমেছে।
জনসংখ্যার প্রবল হারে বৃদ্ধির ফলে দেশে যাতে জন বিস্ফোরণ না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে অনেক আগেই পদক্ষেপ করেছিল বেজিং। ভারতের প্রতিবেশী এই দেশে কঠোরভাবে 'এক সন্তান নীতি' মেনে চলা হত। যা কার্যকর করা হয়েছিল সেই ১৯৮০-এর দশকে।
এর প্রায় সাড়ে তিন দশক পর, ২০১৬ সালে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নয়া নীতি প্রণয়ন করে চিনের সরকার। এবং সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে কঠোর 'এক সন্তান নীতি' প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে চিনের সরকার জানিয়ে দেয়, দম্পতিরা চাইলে সর্বাধিক তিনটি সন্তানের জন্ম দিতে পারে।
এর ফলে ফের একবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। যা একদিকে যেমন চিনের অর্থনীতির উপর চাপ তৈরি করতে পারত, তেমনই এটাও ঠিক যে চিনের সামগ্রিক বৃদ্ধি বা আর্থিক সমৃদ্ধি অনেকাংশে সেদেশের বিপুল পরিমাণ জনসংখ্য়ার শ্রমের উপরেই নির্ভরশীল।
এই প্রেক্ষাপটে পরপর তিনবছর চিনের জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এর নেপথ্য কারণ নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করছে, এর পিছনে মূলত দু'টি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, সময় যত এগিয়েছে, চিনে জীবন ধারণের খরচ আকাশ ছুঁয়েছে। ফলত, সন্তানের জন্ম দিয়ে আর আর্থিক বোঝা বাড়াতে চাইছে না বহু দম্পতি। দ্বিতীয়ত, আগেকার দিনের তুলনায় বর্তমানে চিনের মেয়েরা অনেক বেশি সংখ্যায় চাকরি করছে। তারা উচ্চশিক্ষা লাভ করছে। তার ফলেও মহিলাদের মধ্য়ে একাধিক সন্তান ধারণের প্রবণতা কমছে।
এদিকে, এই পরিস্থিতিতে শীঘ্রই চিন বুড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নামে একটি গবেষণা গোষ্ঠী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে চিনের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরই বয়স হবে ৬০ বছরের বেশি।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চিনের সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, এবার সেদেশে অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানো হবে। যে বয়স সীমা বহু বছর ধরে সংশোধিত করা হয়নি। ইতিমধ্য়েই সেই নয়া নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে (১ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে)।