শিশির গুপ্ত
সেনা কমানো তো দূরের কথা, লাদাখ সীমান্তে আরো জাঁকিয়ে বলতে চলেছে চিন, এমনটাই মনে করছে ভারতীয় সেনা। যেভাবে সেখানে লাল ফৌজের পোস্টে বাড়তি সেনা ও রসদ আসছে, যেভাবে রাস্তা নির্মাণের কাজ গতি বৃদ্ধি পেয়েছে আকসাই চিনে, তাতে এটি স্পষ্ট যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চাপ রাখতে চায় চিন।
এপ্রিল থেকে লাদাখে যে পরিস্থিতি, তার সমাধানসূত্র বার করতে আট দফা কথা হয়েছে যদিও তাতে কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। সেনার বর্ষীয়ান কম্যান্ডারদের সূত্রে জানা যাচ্ছে যে লাল ফৌজ কারাকোরাম পাসের পূর্বের সমর লুঙ্গপায় ১০টি ডাগআউট তৈরি করেছে। একই ভাবে রেচিন লা-এর দক্ষিণে মাউন্ট সাজুমে ১০টি ডাগআউট খোঁড়া হয়েছে। এছাড়াও ডিবিও-র রাস্তার ৭০ কিলোমিটার পূর্বে ওইজিল জিলগাতে সেনা বাড়াচ্ছে চিন।
ওই সব স্থানেই চিন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে মতাভেদ রয়েছে। ২০০২ সালে যখন দুই পক্ষ ম্যাপ আদানপ্রদান করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিল, সীমান্ত নির্ধারিত করার জন্য, তখনই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সমর লুঙ্গপায় ১৭৯ বর্গ কিলোমিটার ও মাউন্ট সাজুমে ১২৯ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে মতাভেদ আছে। ওই অঞ্চলে ওইজিল জিলগা হল চিনের খুব বড় সামরিক ঘাঁটি। তাই এখনই চিন হাতিয়ার ফেলে লাদাখ থেকে পাততাড়ি গোটাবে এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। ফলে মারাত্মক শীতেও ভারতীয় সেনাকে ওখানেই থাকতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চুশূলের দক্ষিণে শেনডঙ্গ থেকে স্প্যানগুর গ্যাপের রাস্তায় ৬০টি ভারি ট্রাক যাওয়ার খবর পেয়েছে ভারতীয় সেনা। এটাও জানা গিয়েছে পুরো প্রকৃত সীমান্তরেখা বরাবর নজরদারির সরঞ্জাম বসাচ্ছে চিন। আকসাই চিনের বিভিন্ন স্থানে চিনা ঘাঁটিতে বিপুল সংখ্যক সেনা আসছে, আগে যারা ছিল তাদের পরিবর্তে। ফলে প্রস্তুতিতে কোনও ঢিল দিচ্ছে না চিন।
যাতে দ্রুত দেপসাং ও ডিবিও সেক্টরে যাওয়া যায়, তার জন্য রাস্তা তৈরি করছে লাল ফৌজ। এর জন্য কারাকোরাম পাসের উত্তর থেকে চিপ চ্যাপ উপত্যকা অবধি রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এলএসি থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে ছুটি চ্যাং লা-তে জোরকদমে চলছে রাস্তা বানানোর কাজ। প্যাংগয়ের উত্তরে ফিঙ্গার আট থেকে ফিঙ্গার ফোরে যাওয়ার কোনও লক্ষণই নেই লাল ফৌজের। উল্টে ফিঙ্গার ৬ থেকে ফিঙ্গার ৮ অবধি একটি রাস্তা চওড়া ও পিচ দেওয়ার কাজ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে যাতে দ্রুত সেনা ওখানে নিয়ে আসা যায়, তার জন্যেই ওই কার্যত জনমানবশূন্য স্থানে চওড়া রাস্তা বানাচ্ছে চিন।
এছাড়াও লাদাখে এলএলির ওপারে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২৮৫টি কনটেনার হাউসিং মডিউল তৈরি করেছে লাল ফৌজ। এখানে থাকতে পারবেন চিনা সেনারা। ডেপসাং ও গালওয়ান, উভয় স্থান থেকে কিছুটা দূরে কনটেনার ইউনিট রেখেছে চিন।