চিন যে লাদাখে নানান উপায়ে জমি দখল করতে চেয়েছিল, সেটা স্পষ্ট ভাবে উঠে এসেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বর্ষশেষের রিভিউতে। শুধু বিপুল সংখ্যক লোকবল জড়ো করা নয়, বিভিন্ন নতুন প্রকারের অস্ত্র ব্যবহার করে লাদাখে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছিল চিন বলেই জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
রিভিউতে বলা হয়নি ঠিক কি নয়া ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে লাল ফৌজ। তবে গালওয়ান ও প্যাংগং সোতে চিনের তরফ থেকে যে পাথর, পেরেক দেওয়া লাঠি, লোহার রড প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটা তখনই প্রকাশ্যে এসেছিল। রিভিউতে বলা হয়েছে যে জোর জবরদস্তি করে লাল ফৌজ স্ট্যাটাস কো বদলাতে এসেছিল কিন্তু ভারতীয় সেনা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল তাদের প্রতিহত করার জন্য।
পয়লা জানুয়ারি এই রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে বায়ুসেনার সঙ্গে এক যোগে কাজ করে স্থলসেনা খুব দ্রুত অস্ত্রশস্ত্র ও বাহিনী জুটিয়ে ছিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য়। দ্রুত রাস্তা ও ব্রিজও নির্মাণ করা হয় যাতে অতিরিক্ত সেনা আসতে পারে এলাকায়।
মন্ত্রকের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় একাধিক জায়গায় চুক্তিভঙ্গ করে জবর দখল করতে গিয়েছিল চিন। সেখানে দৃঢ় ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ভারত কিন্তু খেয়াল রাখা হয়েছে যাতে আরও উত্তপ্ত না হয়ে যায় সংঘাত। পূর্ব লাদাখে ভারতের যে অবস্থান সেটাকে বজায় রাখার জন্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে রিভিউতে লিখেছে সেনা। ১৫ জুন গালওয়ান সংঘর্ষে যেমন ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয় তেমন চিনেরও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে রিভিউতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত চিনের তরফ থেকে মৃত্যু সংখ্যা ঘোষণা করা হয়নি।
চিনের মতিগতি বুঝতে পেরে ভারত যে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ চূড়ো দখল করেছিল গত অগস্টে, সেই কথাও উঠে এসেছে বার্ষিক বিশ্লেষণে। প্রতিকুল আবহাওয়া সত্ত্বেও সেই চূড়োতে এখনও অবস্থান করছে ভারতীয় সেনা। এই মুহূর্তে ভারতীয় সেনা চিনের সমস্ত গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারছে। তাই কোনও এদিক ওদিক হলেই যথাযোগ্য ব্যবস্থা তারা নিতে পারে।
দফায় দফায় আলোচনা হলেও এখনও লাদাখের অচলাবস্থা নিয়ে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে গালওয়ান সংঘর্ষের পর। ভারত চায় এপ্রিলে যে অবস্থান ছিল এলএসি-তে সেটায় ফিরে যাওয়ার। অন্যদিকে ১৯৫৯-এর প্রস্তাব অনুযায়ী এলএসি নির্ধারণ করে সেনা সরাতে চায় চিন, যেই প্রস্তাব আগেই ভারত খারিজ করেছে।
রিভিউতে লেখা হয়েছে যেভাবে বায়ুসেনা বিপুল সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র ও লোকবলকে অল্প সময়ের মধ্যে লাদাখ সীমান্তে নিয়ে যেতে পেরেছিল, তাতে ওখানকার পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। ভারত যে পুরোপুরি প্রস্তুত, প্রতিপক্ষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে যায়।